অনলাইন ডেস্ক :
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার শিশু অধিকার বিষয়ক দূত বক্তব্য দেওয়ার সময় বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আলবেনিয়া ও মাল্টা। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া লভোভা-বিলোভার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তার ভিডিও বক্তব্যের সময় বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে ওই ওয়াক আউটের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাশিয়ার সভাপতিত্বে ইউক্রেইন বিষয়ক ওই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের মূল ফোকাস ছিল ‘সংঘাতমুখর অঞ্চলগুলো থেকে শিশুদের সরিয়ে নেওয়া’; জাতিসংঘের মাধ্যমে বৈঠকটি ইন্টারনেটে দেখানোর একটি প্রচেষ্টাও ছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তা আটকে দেয়। জাতিসংঘের সম্মেলন কক্ষে ওই আলোচনায় যখন রুশ কমিশনার লভোভা-বিলোভা কথা বলা শুরু করেন, তখনই চার দেশের কূটনীতিকরা কক্ষটি ছেড়ে বেরিয়ে যান। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড পরে সাংবাদিকদের বলেন, “লভোভা-বিলোভা যেন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিয়ে ইউক্রেইনে তার করা নির্মম কাজগুলোর পক্ষে কিছু বলতে না পারে এবং মিথ্যা তথ্য ছড়াতে না পারে সেজন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মিলে ওই ওয়েবকাস্ট আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।” গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেইনে সেনা অভিযান শুরুর পর প্রতিবেশী দেশটি থেকে ‘বেআইনিভাবে’ শিশুদের সরিয়ে নেওয়া এবং লোকজনকে রাশিয়ায় স্থানান্তরের অভিযোগে গত মাসে আইসিসি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও কমিশনার লভোভা-বিলোভার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। যে চুক্তিতে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মস্কো তাতে স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় ওই পরোয়ানাকে ‘মূল্যহীন’ অ্যাখ্যা দিয়েছে রাশিয়া। কেবল রাশিয়াই নয়, তাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী অনেক দেশই আইসিসির সদস্য নয়। ইউক্রেইন থেকে হাজার হাজার শিশুকে রাশিয়ায় নিয়ে আসার কর্মসূচি নিয়ে রাশিয়া কখনো লুকোছাপা তো করেইনি, উল্টো একে যুদ্ধের কারণে বিপাকে পড়া অনাথ ও এতিমদের সুরক্ষায় মানবিক কর্মসূচি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। লভোভা-বিলোভা বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ শিশুসহ প্রায় ৫০ লাখ ইউক্রেইনীয় রাশিয়ায় গেছেন। এদের মধ্যে দুই হাজার শিশু বিভিন্ন এতিমখানা থেকে তাদের আইনি অভিভাবকের সঙ্গেই গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ৩০০ শিশু ইউক্রেইনে ফিরেছে, ৪০০ রাশিয়ার বিভিন্ন এতিমখানায় আছে আর ৩৫৮টি শিশু দত্তক নেওয়া বিভিন্ন রুশ পরিবারে আছে, জানিয়েছেন তিনি। লভোভা-বিলোভার বক্তব্য শেষে সম্মেলন কক্ষে ফিরে ব্রিটিশ কূটনীতিক আসিমা গাজি-বুইলন বলেন, “এসব শিশুর সুরক্ষা দিচ্ছে বলে দাবি করছে রাশিয়া। তা তো নয়ই, উল্টো এটি হচ্ছে একটি সুপরিকল্পিত নীতি, যাতে ইউক্রেইনীয় পরিচয় ও রাষ্ট্র পরিচয় মুছে ফেলা যায়।”নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় লভোভা-বিলোভা রাশিয়ায় থাকা ইউক্রেইনীয় শিশুদের ভিডিও দেখিয়ে বলেন, “জোরের সঙ্গে বলতে চাই, ইউক্রেইনের মতো, আমরা শিশুদের নিজেদের প্রচারে কাজে লাগাই না।” জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজায়া গত মাসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইউক্রেইন নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার পরিকল্পনা আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও অনেকদিন আগেই করা হয়েছিল; এই বৈঠক পুতিন ও লভোভা-বিলোভার বিরুদ্ধে আইসিসির অভিযোগের পাল্টায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হচ্ছে না। জাতিসংঘের ওয়েবকাস্ট আটকে দেওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। তবে গত মাসেই উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার লংঘন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতিত্বে নিরাপত্তা পরিষদে হওয়া অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠকের ওয়েবকাস্টও চীন আটকে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু