April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 22nd, 2022, 9:44 pm

নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্যে বিপাকে বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্যে বিপাকে ঠিকাদাররা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লোকসানের ঝুঁকিতে তারা সরকারি অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে। আর ঠিকাদাররা কাজ না করার ঘোষণা দেয়ায় বাধ্য হয়ে সরকারের কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর যেসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি সেগুলো ধীরগতির ফাঁদে পড়েছে। ঠিকাদাররা রেট শিডিউল বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর, রেলওয়ে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ বেশকিছু সরকারি সংস্থা রেট শিডিউল পুনর্নিধারণ করেছে। কিন্তু তারপরও ঠিকাদাররা পেরে উঠছে না। ঠিকাদার এবং নির্মাণখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, লাগামহীন হয়ে পড়েছে দেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম। বিশেষ করে রডের দাম আকাশছোঁয়া। সিমেন্ট এবং বিটুমিনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ইট, বালু দাম। একই সঙ্গে জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকের মজুরিও এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। সামগ্রিকভাবে প্রায় ৪০ শতাংশ নির্মাণ খরচ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রকল্প ছাড়াও ব্যক্তিপর্যায়ের নির্মাণকাজও একরকম থমকে গেছে।
সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর ধরেই অস্থির দেশের নির্মাণসামগ্রীর বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। কিন্তু এবারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিবছরের স্বাভাবিক নিয়মের কোনো মিল নেই। ৬ মাস ধরে নির্মাণসামগ্রীর বাজার একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্ট, রেডি মিক্স, বিটুমিন এবং লোহাজাতীয় সব জিনিসের দাম উপকরণভেদে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের তীব্র সংকট। শতভাগ মার্জিন দিয়েও (আমদানি ব্যয়ের পুরো টাকা পরিশোধ) অনেকে এলসি খুলতে পারছে না। বড় অনেক ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডলার নেই। কোনো কোনো ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ করার গ্যারান্টিও চায়। তারপর দুই শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরকারি কাজের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারদের সংকট আরো বেড়েছে। আর বিদ্যমান বাস্তবতায়ও দরপত্রের সময় নির্ধারিত দরেই ঠিকাদারদের কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা রেট শিডিউল সমন্বয় না করায় ক্রমেই বাড়ছে ঠিকাদারদের ক্ষোভ-অসন্তোষ।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। একইভাবে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৬৪ হাজার টাকা, যা বেড়ে হয়েছে ৯২ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি টন বিটুমিন ৪৮ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা, লিটারপ্রতি ৮০ টাকার ডিজেলের দাম হচ্ছে ১০৯ টাকা। ৮ হাজার টাকার ইটের গাড়ি ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ২ হাজার ২০০ টাকার বালুর গাড়ি ২ হাজার ৭০০ টাকা। তাছাড়া এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রেডিমিক্স, পাথর এবং শ্রমিকের মজুরিও। সরকার চলতি বছরের নির্মাণ উপকরণের যে রেট প্রকাশ করেছে বাজারমূল্য তার চেয়েও বেশি। অনেক ঠিকাদারেরই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী কাজ নেয়া রয়েছে। আইনি জটিলতা থাকায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ওসব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে বিষয়টি সমাধানে সরকার নির্বাহী ক্ষমতাবলে পরিপত্র জারি করতে পারে। নইলে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন আরও বড় চ্যালেঞ্জে পড়বে। সরকারি সংস্থাগুলো এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নির্মাণ উপকরণের বাজার স্থির না হওয়ায় সরকারি সংস্থাগুলো সেসব নিয়েও সংশয়ে রয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় ছোট ছোট প্যাকেজে কাজ করা হয়ে থাকে। ওই কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেলেও কোনো কাজ বন্ধ হয়নি। তবে কাজের গতি কমেছে। ঠিকাদাররা বুঝতে পেরেছে কাজ করলে তাদের লাভ হবে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন জানান, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চলমান কাজের গতি অনেকাংশে কমেছে। ঠিকাদারদের কঠোর নির্দেশনা দেয়ার পরও তারা খুবই ধীরগতিতে কাজ করছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ওই প্রকল্পের কিছু ঠিকাদার কাজ চালু অবস্থায় অবশিষ্ট কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। সেজন্য ওই প্রকল্পে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।