April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 11th, 2022, 9:50 pm

নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বমূল্যে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে ধস

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে আবাসন ব্যবসায়ীরা। মূলত নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ফ্ল্যাট-আপার্টমেন্ট বিক্রিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে আবাসন প্রকল্পে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি খরচ পড়ছে। ফলে ২০২১ সালের চেয়ে চলতি বছর অর্ধেকে নেমেছে ফ্ল্যাট-আপার্টমেন্ট বিক্রি। অথচ ২ বছর আগেও ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কম ছিল। আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বাজারে রডের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এখন ৯০ হাজার থেকে ৯২ হাজার ৩শ টাকায় প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে। আগে কখনো রডের দাম এত বেশি হয়নি। এক-দু’মাস আগেও ৮৫-৮৬ হাজার টাকা টন প্রতি ওসব ওসব রড ছিল। বর্তমানে ৫শ টাকার নিচে কোনো সিমেন্ট নেই। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট ৫০০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মার্চে সিমেন্টের দাম ৫২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে একমাস আগেও ওসব সিমেন্টের দাম ছিল ৪০০-৪২০ টাকা। আর টাইলসের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
সূত্র জানায়, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি টনে রডে প্রায় ৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে। সিমেন্ট প্রতি ব্যাগে বেড়েছে ২২ শতাংশ বেড়েছে। কারণ রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই আমদানি করতে হয়। তাছাড়া পাথর প্রতি ঘনফুটে ২৪ শতাংশ, ইট প্রতি হাজারে ২২ শতাংশ, মোটা বালু প্রতি ঘনফুটে ৫০ শতাংশ, ইলেক্ট্রিক ক্যাবলে (১.৫ বিওয়াইএ) ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চলমান বা শেষ হয়েছে এমন অনেক আবাসন প্রকল্পে বাড়তি দাম চাচ্ছে। নির্মাণসামগ্রীর দামের অজুহাতেই বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিহ্যাব পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয় কাজ শুরুর পর অতিরিক্ত খরচ (রড-সিমেন্ট ইত্যাদির দর বৃদ্ধির প্রভাব) ১০ শতাংশের কম হলে আগের দামেই ক্রেতার কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হবে। আর ১০ শতাংশের বেশি খরচ পড়লে ক্রেতা-বিক্রেতার সমঝোতার ভিত্তিতে তার দাম নির্ধারণ হবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হয়। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে বিক্রি হয়েছিল ১৫ হাজার ফ্ল্যাট। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিক্রি হয় গড়ে ১২ হাজার ৫শ ফ্ল্যাট। ২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৪ হাজার এবং ২০২১ সালে বিক্রি হয় ১৫ হাজার ফ্ল্যাট। তবে গত বছরের (২০২১) তুলনায় চলতি (২০২২) বছরের নভেম্বর এখন পর্যন্ত অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৮ হাজারের মতো ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল ২০২২ সালেও ১৫ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হবে। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দামও বেড়েছে। আর তাতেই বিক্রিতে নেমেছে ধস।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ জানান, করোনাকালীন সব কিছু থমকে যায়। মূলত তখন থেকেই নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে থাকে। কারণ তখন আমদানি হচ্ছিল না। পরবর্তীসময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লে একটা যৌক্তিক সমাধান দেয়া হয়েছে। রিহ্যাব একটি বাসযোগ্য নগরী গড়তে কাজ করে যাচ্ছে। যদি কোনো প্রকল্পে ১০ শতাংশ বা তার বেশি দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা ক্রেতা-বিক্রেতার সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান হবে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক রিহ্যাব চায় না।