সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শাপলা পাতা মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশে শাপলা পাতা মাছ ধরা এবং বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও কেউ তা মানছে না। প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে এই মাছ। এভাবে নিধন চলতে থাকলে এক সময় এই মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া শাপলা পাতার বিচরণ ক্ষেত্রগুলোতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার কথা বলছে মৎস্য বিভাগ।
শাপলা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম স্টিংরে ফিস। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আই ইউ সিএন) কর্তৃক শাপলা পাতা মাছকে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাগেরহাট, বরগুনাসহ উপকূলের মাছের আড়তে প্রায়াই ছোট-বড় বিভিন্ন মাপের শাপলা পাতা মাছ বিক্রি হতে দেখা গেছে। সম্প্রতি ৪০০ কেজি ওজনের একটি শাপলা পাতা মাছ বাগেরহাট কেবি বাজার মাছের পাইকারি আড়তে বিক্রির জন্য তোলা হয়। প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি হয়। পরে মাছ ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে মাছটি খুচরা বাজারে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে মোট এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
পিরোজপুরে সদরের কদমতলা ইউনিয়নের পোরগোলা গ্রামের জেলে মো. রুস্তম আলী হাওলাদার জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে সাগরে আসা যাওয়া করছেন। জেলেরা হরহামেশা শাপলা পাতা মাছ ধরছে। বড় সাইজের শাপলা পাতা ধরতে জেলেরা সমুদ্রের তীরের কাছাকাছি হাজারও বর্শি পেতে রাখে। তীর দিয়ে শাপলা পাতা বিচরণ করার সময় বর্শিতে আটকে যায়। আর ছোট সাইজের শাপলা পাতা জালে ধরা পড়ে। জেলেরা না জেনেই এই মাছ ধরছে।
একই গ্রামের সমুন মল্লিক জানান, তাদের জালেও বিভিন্ন সময় শাপলা পাতা মাছ ধরা পরে। সাগরে ধরার পরার পর তারা বিক্রির জন্য মাছের আড়তে নিয়ে যায়। সেখানে পাইকারি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। তারা জানে না শাপলা পাতা মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
মিলন শেখ ও রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন পাইকারি ক্রেতা জানান, তারা আড়ৎ থেকে প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে শাপলাপাতা ক্রয় করে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে কেটে খণ্ড খণ্ড করে কেজি ধরে বিক্রি করে থাকেন। ক্রেতাদের কাছে শাপলা তাপা মাছের চাহিদা রয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ প্রজাতির শাপলা পাতা থাকলেও আমাদের দেশে ৬ প্রজাতির শাপলা পাতা বেশি দেখা যায়। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শাপলা পাতা মাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শাপলা পাতা ওষুধ গুনসম্পন্ন মাছ। জেলেরা কোন কিছু না যেনে অধিক লাভের আশায় শাপলা পাতা মাছ নিধন করছে। নির্বিঘ্নে এই মাছকে বংশ বিস্তার করতে দেয়া উচিত।
তিনি জানান, সাগরের যে এলাকায় শাপলা পাতা মাছের বেশি বিচরণ ওই এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা উচিত।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবেদ আলী জানান, ভারত থেকে আমদানি করা অধিকাংশ শাপলা পাতা মাছ পাইকারি বিক্রির জন্য বাগেরহাটসহ বিভিন্ন আড়তে নেয়া হয়। প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে তা বিক্রি করা হয়। এছাড়া দেশের জেলেরা মাঝে মধ্যে বিক্রির জন্য শাপলা পাতা মাছ কেবি বাজারে আনে। তবে আগের চেয়ে এখন জেলেদের জালে শাপলা পাতা মাছ কম ধরা পরছে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, শাপলা পাতা মাছ সমুদ্রের ইকোসিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। এই মাছ ধরা এবং ক্রয়-বিক্রিয় নিষিদ্ধ। আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। শাপলা পাতা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। বন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মৎস্য বিভাগকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে ৫৬ প্রজাতির শাপলা পাতা মাছের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রজাতিভেদে শাপলা পাতা ৮০০ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত শাপলা পাতা মাছ বেঁচে থাকে। বংশ বিস্তারের সময় এই মাছ সাগরের তীরে আসে। শাপলা পাতা মাছ না ধরার জন্য জেলেদের সচেতন করতে হবে। সবাই সচেতন না হলে এক সময় শাপলা পাতা মাছ বিলুপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি