জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
বিশেষ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের ফুলের নৌকা উপহার দেয়া মৌলভীবাজার পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহানারা বেগম জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘বিতর্কিত’ এই নেত্রীকে মনোনয়নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গেল ১লা নভেম্বর ডা. দিলশাদ পারভীনকে সভাপতি ও জাহানারা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল মৌলভীবাজার জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমদ এই কমিটির অনুমোদন দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহানারা বেগম বিএনপি নেত্রীর পরিচয়ে গেল নির্বাচনে মৌলভীবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফুল দিয়ে নৌকার প্রতিকৃতি বানিয়ে খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো: কামাল হোসেনকে উপহার দেন। সর্বশেষ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের জয়বাংলা বাই সাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানের সঙ্গে অংশ নেন।
জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ও তাদের নৌকা উপহার দেয়ার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। অবশ্য জাহানারা বেগম আওয়ামী লীগ নেতাদের নৌকা উপহার দেয়ার কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কাউন্সিলর নির্বাচন করতে তিনি রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণে এ কাজটি করেছেন এবং সফল হয়েছেন।
এ কারণে অনেকটা আবেগের বসে তিনি ‘কৃতজ্ঞতাবশত’ আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যসহ অন্য নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা উপহার দিয়েছেন’’। জাহানারা বেগম বলেন, ‘পরপর তিনবার পৌরসভায় কাউন্সিলর নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় এক ভোটে আমাকে ‘ফেল’ দেখানো হয়েছে। এজন্য এবার আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছি
জাহানারা বেগমের এই দুঃখ প্রকাশকে ভালো চোখে দেখছে না বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ঘেঁষা একজন নারীকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা সমীচীন হয়নি। এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এবং নেতাদের বাসা-বাড়ি গিয়ে নৌকার প্রতীক উপহার দেয়া জাহানারা বেগম বিএনপি’র না আওয়ামী লীগের? তা আগে ফায়সালা হওয়া উচিত। তা না হলে কোনো নেতাকর্মী তাকে বিশ্বাস করবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলাদলের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, যারা সুবিধা আদায়ে প্রতিপক্ষ দলের এমপি এবং নেতাদের কাছে পড়ে থাকে তারা আগামী দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে কিসের নেতৃত্ব দেবে-এটা তামাশা আর হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। তারা জাহানারা বেগমের পদ দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাউর রহমান বলেন, এ নিয়ে দলের অনেকেই আমার কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিএনপি’র মতো একটি বৃহত্তম দলে এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টিগোচরে আনবো।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার মুঠোফোনে বলেন, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আপা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো এখন জেলে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি সম্পাদকের অনুরোধে আমার সার্বিক সহযোগিতায় গত ৮ অক্টোবর জেলা মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জাহানারা বেগম নামে কেউ অংশ নেয়নি। তার নাম কীভাবে এলো, কার প্ররোচনায় এলো তা আমার জানা নেই। যে মহিলা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পৌর কাউন্সিলর হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদকেও ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে। তার এই ছবি দেখে আমি নিজেও তাজ্জব। দু’দিন আগে আমি এই ছবিগুলো পেয়েছি। আগামীকালের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবো।
আরও পড়ুন
গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই: জামায়াতের আমীর
জুলাই-আগস্ট বিদ্রোহে ৮৭৫ জন শহীদের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির: ফখরুল
সাভারে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা নাঈমকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ