অনলাইন ডেস্ক :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চরম কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। রাশিয়ার গণমাধ্যম বন্ধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রবেশাধিকারে বাধা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেন সুইফট থেকে বিতারিত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন রুশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমান যোগাযোগ নিষিদ্ধ, এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাশিয়াকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ বিস্তার লাভ করেছে।গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল দখল নিয়েছিল তা ধরে রাখতে পারেনি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ জয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে রুশ বাহিনী। এপ্রিলে তারা নাটকীয়ভাবে উত্তর ইউক্রেনে সেনা প্রত্যাহার করে পূর্বে ও দক্ষিণে মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার এখন টার্গেট লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক পুরোপুরি দখল। বর্তমানে রাশিয়া বিধ্বস্ত শহর মারিউপোল ধরে রেখেছে।ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অন্যতম প্রধান চরিত্রে রয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বের প্রধান সামরিক জোট ন্যাটো। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ন্যাটো ইউক্রেনে বিপুল সামরিক সহযোগিতা করছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর অস্ত্র সরবরাহের অর্থ হলো তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ন্যাটো ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হলো ন্যাটোর এ যুদ্ধে জড়ালে তার লাভ কোথায়? ন্যাটো চায় নিজেকে আরও সম্প্রসারিত করতে। বিশ্ব মানচিত্রে দেখা যাবে, বেলারুশ আর ইউক্রেন বাদে রুশ সীমান্তের সব দেশ কবজা করেছে ন্যাটো। ন্যাটোর মূল শক্তি যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটোতে মোট বাজেটের সিংহভাগ (৭০ শতাংশ) তারাই বহন করে। ন্যাটো উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় ধরে টিকে আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সোভিয়েত পতন করতেও সক্ষম হয়েছিল জোটটি। অন্যদিকে ন্যাটোর সঙ্গে লড়তে রাশিয়া সেসময় গঠন করে পাল্টা জোট ‘ওয়ারশ’। সোভিয়েত বিলুপ্তের পর সেটিও বিলুপ্ত হয়। তবে ন্যাটো আরও সম্প্রসারিত হতে থাকে। ওয়ারশতে থাকা সব দেশ যোগ দেয় ন্যাটোতে। ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত দেশ ৩০টি। এরমধ্যে ২৮টিই ইউরোপের, বাকি দুটি উত্তর আমেরিকার। ইউরোপের আরও দুই দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া এশিয়াতে জোটটি শক্তি বাড়াতে জাপানের সঙ্গে তৎপরতা বাড়াচ্ছে।প্রশ্ন উঠতেই পারে ন্যাটোর কোনো দেশ যদি এই যুদ্ধে জড়ায় কিংবা জোটটির কোনো দেশের সঙ্গে রাশিয়া যুদ্ধে যায়, তাহলে এর পরিণতি কী হবে?ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার যে পরিণতি দাঁড়িয়েছে তা ভয়াবহ। ইউক্রেনে ন্যাটোর কেবল সমর্থন থাকায় অচল, শান্ত ও একঘরে হয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ৭৭তম বিজয় দিবসেও (৯ মে) প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কোনো হুংকার শোনা যায়নি। পুতিনের দাবি, তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকে রাখতে বাধ্য হয়েই এই যুদ্ধে জড়িয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ইউক্রেনকে রক্ষায় বদ্ধপরিকর। রাশিয়া যদি পরাজিত হয় তাহলে এর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা এখনো অনুমেয় হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, পুতিন যদি হেরে যান তাহলে তার দেশকে উত্তর কোরিয়ার মতো বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাবেন।এ ছাড়া রাশিয়া যদি সম্ভাব্য পরাজয় বুঝতে পারে, তাহলে ন্যাটোর ফ্রন্টলাইন পোল্যান্ডে হামলার জন্য এগোতে পারে। যদি সত্যিই ইউক্রেনে রাশিয়া হেরে যায় এবং পোল্যান্ডের দিকে পা বাড়ায় তাহলে ন্যাটো তার চিরচেনা রূপ দেখাবে। কেবল নব্বইর দশকে ন্যাটোর ইরাক আক্রমণে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু