November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 28th, 2023, 8:31 pm

পতিত জমিতে স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছে চুয়াডাঙ্গার রিটন

স্ট্রবেরি ফল বিদেশি হলেও বাণিজ্যিকভাবে পতিত জমিতে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন। অপ্রচলিত ও উচ্চ মূল্যের ফল হওয়ায় লাভজনক চাষে পরিণত হয়েছে স্ট্রবেরি। ফুল আর কাঁচা-পাঁকা ফলে ভরে গেছে ছোট ছোট গাছ। স্ট্রবেরি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় দেশের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর এলাকার লক্ষীপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করেন। খয়েরহুদা গ্রামের মাঠে ড্রাগনের পতিত জমিতে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন তিনি। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয় গাছগুলো। ৪০ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন। বৈরি আবহাওয়া ও ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার চারা মারা যায়।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। কিছুদিন পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। সাদা ফুল, সবুজ কাঁচা ফল আর পাঁকা লাল স্ট্রবেরি ফল গাছে শোভা পাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যাবে। প্রতি কেজি ফল বিক্রি হচ্ছে বাজারে পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকায়। ঢাকার কাওরান বাজারের ফল মার্কেটে স্ট্রবেরি ফল বিক্রির জন্য পাঠানো হয়।

প্রতি বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে স্ট্রবেরি চাষে। পাঁকা ফলগুলো প্লাস্টিকের কাপ দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। গাছের নিচে কচুরিপানা দিয়ে রাখতে হয় যাতে ফলগুলো মাটিতে ঠেকে পচে না যায়। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয় স্ট্রবেরি বাগান। পরিচর্যার অভাব হলে গাছ ও ফল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ পাখি পাঁকা ফলগুলো খেয়ে ফেলে। প্রতিদিন ২৫০-৩৫০ কেজি ফল উত্তোলন হচ্ছে। উদ্যোক্তাসহ অন্যরা বাগান দেখতে ছুটে আসছেন।

চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়ায় রুহুল আমিন রিটনের স্ট্রবেরি চাষ দেখে প্রথম দিকে ভাবতো পাগলামি। কারণ উচ্চ মূল্যের এ ফলটি সবচেয়ে বেশি চাষ হয় শীত প্রধান দেশে। এখানকার প্রতিকূল আবহাওয়াকে হার মানিয়ে তিনি সফলতা পেয়েছেন। ২৫ হাজার চারা মারা গেলেও রিটন হতাশ হননি। ৬৫ হাজার স্ট্রবেরি গাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার কেজি ফল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ কোটি টাকা। স্ট্রবেরি বাগানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। যাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে এখান থেকে। ঢাকার কাওরান বাজারের ফল মার্কেটে বিক্রি হয় স্ট্রবেরি। সুস্বাদু, রসালো, মিষ্টি ও সুগন্ধি যুক্ত হওয়ায় স্ট্রবেরি ফলটি সব বয়সের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

কৃষি উদ্যোক্তা জসিম মন্ডল বলেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে স্ট্রবেরি ফল চাষ হওয়ার বিষয়টি শুনার পর বাগানটি দেখতে আসি। বাগানটি ঘুরে দেখলাম। খুব ভাল লাগছে। রিটন ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিয়ে অল্প পরিসরে বাগান করার ইচ্ছা আছে।

স্ট্রবেরি চাষি রুহুল আমিন রিপন জানান, স্ট্রবেরি ফল চাষ করতে গিয়ে প্রথমদিকে নানা জনের নানা মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এটি ব্যায় বহুল চাষ। ফলন ভাল হওয়ায় লাভ হবে। দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে বাগান গড়ে উঠলে। ড্রাগনের সঙ্গে ফসল হিসাবে চাষ করছি। জমিটা পতিত থাকছেনা। অনেক শ্রমিক কাজ করছে বাগানে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, রিটনকে বাজারজাত করণের সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এটি উচ্চ মূল্যের একটি ফসল। ফলন ভাল হলে লাভজনক ব্যবসা। দেশে স্ট্রবেরি চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল হওয়ায় দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যার বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছে।

—-ইউএনবি