April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 13th, 2021, 12:47 pm

পদ্মা সেতুর পিলারে আবারও ধাক্কা, ফেরিতে ফাটল

পদ্মা সেতুর পিলারে আবারও আরেকটি ফেরি ধাক্কা দিয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় কাকলী নামের কে-টাইপ ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। তবে এখনও আহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফেরি কাকলীর ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর খুঁটির পাইল ক্যাপের সামান্য কিছু অংশের কংক্রিট উঠে গেছে। এতে সেতুর তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। তারপরও এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ফেরিটতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের বড় ক্ষতি হতে পারতো। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।

পদ্মা সেতুর খুঁটিতে বারবার ফেরির ধাক্কা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সেতুর খুঁটি উঠে যাওয়ার পর কয়েক বছর ধরেই পদ্মা সেতুর নিচ দিয়েই ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করছে। তবে এ বছর কেন বারবার ফেরি পদ্মা সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটছে।

এর আগে গত ৯ আগস্ট রাতে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর খুঁটিতে আঘাত করে। এতে ফেরিতে থাকা দু’টি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেরির ৫ যাত্রী আহত হয়। এ ঘটনায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ লৌহজং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এবং ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার ও হুইল সুকানীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার যুগ্ম সচিব ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (কারিগরি) রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার আগেই ফেরি আবার পদ্মা সেতুর খুঁটিতে আঘাত করল।

এছাড়া গত ২৩ জুলাই নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ‘শাহজালাল’ নামে রো রো ফেরির সংঘর্ষ হয়। এতে ফেরিটির অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হন।

ওই ঘটনার পরও ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমান ও সুকানী সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।

ঘটনা তদন্তে ওই দিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিআইডব্লিউটিসি। তাদের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষের পেছনে রো রো ফেরিটির ইনচার্জ মাস্টার আব্দুর রহমান খান ও সুকানি সাইফুল ইসলামের দায়িত্বহীনতা রয়েছে।

ফেরি বা অন্য কোনো জলযানের সংঘর্ষ থেকে নিরাপদে রাখতে পদ্মা সেতুর পিলারগুলো রাবার দিয়ে মোড়ানো, ঘাট স্থানান্তর ও স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে সক্ষম ফেরি চলানোর পরামর্শও দিয়েছে ওই কমিটি। এছাড়াও নৌমন্ত্রণালয় থেকে পৃথক আরেক কমিটিও পদ্মা সেতু ও ফেরি যাত্রীর নিরাপত্তায় রিপোর্ট পেশ করেছে।

মাওয়া নৌ পুলিশের আইসি জেএম সিরাজুল কবির জানান, কে টাইপ ফেরি কাকলী বাংলাবাজার থেকে ছেড়ে মাওয়া আসার পথে পদ্মা সেতুর নীচ দিয়ে যাবার সময় ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১০ নং পিলালে ধাক্কা লাগে।

এছাড়া ২০ জুলাই রো রো ফেরি শাহ মখদুম ১৬ নং পিরালের সাথে ধাক্কা লাগে। এই নিয়ে মোট পাঁচ বার পদ্মা সেতুর পিলারের সাথে ফেরি ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটলো।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগেও চারবার ফেরি পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত হেনেছিল। এসব সেতু সেভাবেই তৈরি করা হয়। গত ১০০ বছর এই নদীতে যেসব জলযান চলেছে, সেগুলো সেতুতে ধাক্কা দিলে কিছু হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং ফেরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফেরি কাকলির চালক মো. বাদল হোসেন বলেন, ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১১-১২ খুঁটির মাঝখান দিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু নদীর প্রচন্ড স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির একপাশে ফাটল ধরে। তবে ফাটল পানির স্তরের উপরে থাকায় ফেরিতে পানি ওঠেনি। পদ্মা সেতুর পিলারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কা লাগার পর ফেরিটি নিয়ে নিরাপদে শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেতুর ১০ নম্বর খুঁটিতে প্রচন্ড ধাক্কায় খুঁটির পাইল ক্যাপের কংক্রিট উঠে যায়। ফেরিতে থাকা এক যান আরেক যানকে ধাক্কা দেয়। অনেকই পড়ে যান। এই সময় ফেরিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

–ইউএনবি