দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ফরিদপুরের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পযন্ত রেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন রেল সংযোগকে নিয়ে ফরিদপুরবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। এ অঞ্চলের মানুষ ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
ঢাকা ভাঙ্গা পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানিয়েছেন , ইতোমধ্যে আমরা এই রেল সড়কে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেনের গতি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার পথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। রেলপথের এই অংশটি উদ্বোধনের দ্বার প্রান্তে রয়েছে। এরপর এই পথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বাণিজ্যিক ট্রেন চালানো হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই রেল সড়ক দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকার সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে গণপরিবহনের একচেটিয়া প্রভাব ও যাতায়াতে বেশি ভাড়া থেকে বাঁচবে এ অঞ্চলের মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশ স্বাধীন যেমন স্বপ্নের ছিলো, ঠিক তেমনি পদ্মা নদীর উপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য ট্রেন চলাচল করবে এটাও একটা স্বপ্নের মতো ছিলো। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বলেন, ঈদসহ প্রতিটা উৎসবে ঢাকা থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে মানুষের প্রচুর কষ্ট হতো। এসময় যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহনগুলো তাদের ই্চছামতো ভাড়া আদায় করতো। ট্রেন চালু হওয়ায় যে আমরা খুশি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ট্রেনে অন্য সময় তো বটেই বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়িতে ফিরতে পারবে এ অঞ্চলের মানুষ। তিনি দাবি করে বলেন, রেল এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক দিলীপ রায় বলেন, কয়েক দিন ধরে রেললাইন পরিষ্কার করছে ও দফায় দফায় ট্রায়াল ট্রেন চলছে। ট্রেনের শব্দে যেন আর তর সইছে না আমাদের। যে পদ্মা নদীতে আগে ফেরি-লঞ্চে পার হতাম সেই পদ্মা সেতুতে এখন ট্রেন চলবে ভাবতেই স্বপ্ন মনে হয়।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান বলেন, এ উপজেলার অনেকেই ব্যবসার কাজে ঢাকায় যায়। এখান থেকে ভেঙে ভেঙে গেলে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকার বেশি খরচ হতো। ট্রেন চালু হলে নিশ্চয়ই এতো খরচ হবে না। পাশাপাশি মালামালও ট্রেনে করে নিয়ে আসতে পারবে।
ফরিদপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মো. নজরুল ইসলাম ট্রেন যোগাযোগের নতুন মাত্রা প্রসঙ্গে বলেন, ফরিদপুরের পাট কলগুলো নয় শুধু, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যটি স্বল্প সময়ে অল্প খরচে রাজধানীতে নিতে পারবে। এটা বিরাট ব্যাপার। সরকারের আন্তরিকতা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না।
এ প্রসেঙ্গ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, দীঘদিনের অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বার উন্মোচন হবে রেল সংযোগের মধ্যে দিয়ে। তিনি বলেন, মানুষের জীবমানের যেমন পরিবর্তন হবে, তেমনি এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে। এতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবকয়টি সংসদীয় আসন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ট্রেনে চড়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দুপুর ২টার দিকে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক