May 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, June 25th, 2022, 7:54 pm

পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য উপযুক্ত জবাব: প্রধানমন্ত্রী

খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে সফলতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে (পদ্মা সেতু নির্মাণ) ষড়যন্ত্রকারীদের উপযুক্ত জবাব দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল. তাদের আমরা উপযুক্ত জবাব দিতে পেরেছি।’

শনিবার মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া প্রান্তে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই সভায় উপস্থিত হন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চালানোর আগে দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৭৫০ টাকা টোল দেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আবারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, তিনি দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, ভাগ্য পরিবর্তন করতে আমি যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করতে সর্বদা প্রস্তুত। আমি আগেও আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে যদি প্রয়োজন হয়, আমি আপনাদের জন্য আমার নিজের জীবন উৎসর্গ করব।’

উল্লসিত লাখো জনতার করতালি এবং ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মধ্যদিয়ে তিনি তার বক্তৃতা শেষ করেন।

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করব যে আমাদের দেশের শিশুরা আরও উন্নত জীবন পাবে। এটা আপনাদের কাছে আমার প্রতিশ্রুতি।’

প্রধানমন্ত্রী মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচনের মাধ্যমে ডাবল ডেক সড়ক ও রেলসেতু উদ্বোধনের পর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান।

এসময় উচ্ছ্বসিত জনতা প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এর আগে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা নিয়ে সমাবেশস্থলে ভিড় করলে সমাবেশে উৎসবমুখর রূপ ধারণ করে। এসময় আ.লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের মানুষ ও নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

পুরুষরা রঙিন টি-শার্ট পরে এবং নারীরা রঙিন শাড়ি পরে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বড় বড় প্রতিকৃতি, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসেন।

বর্ণিল ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ডিজিটাল ব্যানারে সজ্জিত করা হয়েছে অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের এলাকা। সমাবেশের কার্যক্রম সম্প্রচারের জন্য সমাবেশের বিভিন্ন স্থানে বড় স্ক্রিন বসানো হয়েছে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০০১ সালে এই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এর কাজ বন্ধ করে দেন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পুনরায় এর কাজ শুরু করে। অথচ বিএনপি নেতারা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ কখনো পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না।

খালেদা জিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আসুন, দেখুন পদ্মা সেতু হয়েছে কি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক আমলাসহ স্থানীয় লোকজনের একাংশ মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এবং তার পাশে দাঁড়িয়েছে বলে তার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোনো অর্থ দেয়নি, কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতুটি আমাদের হৃদয়ের এবং সেতুটির সঙ্গে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এখানে দুর্নীতি হবে কেন?

তিনি বলেন, সরকার যখন এই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলো তখন তাকে এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে অসম্মান ও মানহানি করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়াও তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে মিথ্যা অভিযোগ এনে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পাশাপাশি শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও এ ব্যাপারে চরম মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, তারা আমাদের যতোই মানসিক যন্ত্রণা দিক না কেনো, আমরা ফিরে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাকে সেতু নির্মাণের সাহস ও শক্তি দিয়েছেন। আমি আপনাদের পাশে আছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সেতুটি নির্মাণ করায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে উত্তাল পদ্মা নদী পারাপারে আর দুর্ভোগ পোহাতে ও প্রিয়জনকে হারাতে হবে না।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্প কারখানা ও কলকারখানা গড়ে উঠবে। এখানে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে এবং এ অঞ্চলের মানুষ তাদের প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। আমরা এটা করতে সক্ষম হব।

—ইউএনবি