অনলাইন ডেস্ক :
মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে। নতুন করে আরও একজন প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক হওয়া সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পাচ্ছেন। রোববার তিনি শপথ নিতে পারেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, শামসুল আলমকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। রোববার বঙ্গভবনে তার শপথ এবং ওইদিনই দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। শামসুল আলম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন। তবে আপাতত অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে রদবদল আনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকালে শামসুল আলম বলেন, খবর সত্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ-সংক্রান্ত ফাইল সই করেছেন বলে জেনেছি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সময় দিলে রোববার কোনো একসময় শপথ অনুষ্ঠান হবে বলেও জানান শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা আমার গত ১২ বছরের কাজের স্বীকৃতি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যেভাবে ১২ বছর ধরে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, নিয়োগ পেলে সেভাবেই করে যাব। শামসুল আলম আরও বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জেনেছি। সেটা আরও ভালো খবর। এখানেই আমার জন্ম, এখানেই আমার পরিচিত। বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন এম. এ. মান্নান। মন্ত্রিসভায় এখন ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। নতুন একজন যুক্ত হলে প্রতিমন্ত্রী হবেন ২০ জন। ড. শামসুল আলম এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ অর্থনীতি এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। কর্ম জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। ড. আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ণকালীন চাকরিরত ছিলেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ৩৫ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা শেষে শামসুল আলম ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সবশেষ গত ৩০ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়। এদিকে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শামসুল আলমকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। এর আগে ২০১৮ সালে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডিউলিং তাকে ‘ইকোনমিক অব ইনফ্লুয়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেয়। এছাড়া কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ২০১৮ সালে শামসুল আলমকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। তার গবেষণা, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দলটি। ৪৬ সদস্যের ওই মন্ত্রিসভায় ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ছয় মন্ত্রণালয় রাখা হয়। মন্ত্রিসভা গঠনের প্রায় সাড়ে ৪ মাসের মাথায় তা পুনর্বিন্যাস করা হয়। গত বছরের ১৯ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। একই দিন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে একই মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী করা হয়। এ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজুল ইসলাম এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় স্বপন ভট্টাচার্যকে। আগে তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও স্বপন ভট্টাচার্যকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। গত বছরের বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর রদবদল করা হয়। এরমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দপ্তর পরিবর্তন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল ওইদিন। এদিকে গত বছরের ১৩ জুন রাতে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। পরে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তার ফল পজেটিভ আসে। এরপর সেই বছরের ২৪ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলাল। পরের দিন তাকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম