নিজস্ব প্রতিবেদক:
আয়ে পিছিয়ে পড়ছে রেল। লোকসানে রেকর্ড গড়ছে। বিপুল বিনিয়োগেও সংস্থাটি আয় বাড়াতে পারছে না। গত ১৩ বছরে রেলের উন্নয়নে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নতুন রেলপথসহ কেনা হচ্ছে বগি ও ইঞ্জিন। কিন্তু এত বিনিয়োগেও ট্রেন চালানোর খরচের অর্ধেকও তুলতে পারছে না রেল। চলতি অর্থবছরে ১৪ হাজার ৯২৮ কোটি বিনিয়োগসহ রেলে খরচ হবে হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। আর ৩ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয়ের বিপরীতে আয়ের লক্ষ্য ২ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। সেজন্য ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করে করেছে রেল। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে এবং আয়ের লক্ষ্য পূরণ না হলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। বছরজুড়েই ট্রেনের টিকিটের জন্য হাহাকার থাকলেও রেলের হিসাবে অবিক্রিত টিকিট থেকে যাচ্ছে। গত জুনে ট্রেনের পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের কেবিনের ৮৬ শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে শীতাতপ তথা এসি শ্রেণির মাত্র ৭৮ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালের জুনে এসির ৯২ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। জুনে শোভন বগিতে পা ফেলার জায়গা না মিললেও ১৩ শতাংশ টিকিট অবিক্রীত ছিল। অথচ ২০১৯ সালে ১৪৯ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। টিকিটবিহীন যাত্রী তুলে কর্মীরা ভাড়ার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার যাত্রী পরিবহনে ৮২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। যদিও ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ছিল। রেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯ কোটি ২৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করে।
সূত্র জানায়, রেলে পণ্য পরিবহনেও গতি নেই। ট্রেনে পণ্য পরিবহনে রেল ৬২ পয়সা আয় করতে ২ টাকা ৪৩ পয়সা খরচ করছে। ১০০ টাকা খরচ করে আয় সাড়ে ২৫ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩ লাখ ১৩ হাজার টন পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ রেলের আয় ৩৫৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অথচ আগের অর্থবছরেই ৬৮ দিন করোনার দীর্ঘ লকডাউনেও ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন করেছিল। রেল আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ শতাংশ কম পণ্য পরিবহন করেছে। কারণ সড়কের চেয়ে খরচ কম হলেও রেলে বেশি সময় লাগে। ২০০০-০১ সালে ৫২ হাজার ৭৩৭টি কনটেইনারে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন পণ্য পরিবহনে রেলের আয় হয়েছিল ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত ২২ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার, আমদানি, রপ্তানি বাড়লেও রেলে পণ্য পরিবহন খুবই নগণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৭টি কনটেইনারে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪২৩ টন মালপত্র পরিবহন করে রেলের আয় ১১৩ কোটি টাকা। তা সারাদেশে মোট কনটেইনারের মাত্র ৩ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, গত অর্থবছরে রেলে সরকারের ১৬ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা খরচ হয়। তা মধ্যে রেলপথ নির্মাণ ও বগি-ইঞ্জিন কেনায় বিনিয়োগ ১২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, যার বড় অংশই বিদেশি ঋণ। আর ট্রেন চালানোর খরচ তথা পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৬২ কোটি। বিপরীতে আয় ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। রেকর্ড ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা লোকসান। আয়ের লক্ষ্য ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, রেলের আয় বাড়াতে ‘নন-কোর বিজনেসে’ জোর দেয়া হচ্ছে। পণ্য পরিবহন বাড়াতে রপ্তানিকারক ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্টদের সাথে বৈঠক হয়েছে। সব দেশেই রেল লোকসানে চলে। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর লোকসান কমবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২