দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সরকার পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বার্ষিক বরাদ্দ ১৪ শতাংশ করে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এই খাতে মোট ব্যয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৬১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৮৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন টাকা এবং চলতি অর্থবছর ২০২১-২২ এ ৭২০ দশমিক ২৮ বিলিয়ন টাকা ধরা হয়েছে।
এর আগে এই খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪৫০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন টাকা; ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৩৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬০১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন টাকা।
বাজেট নথি অনুসারে, একটি সুসংগঠিত পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কাঁচামাল এবং চূড়ান্ত পণ্যের সুষম উত্পাদন ও বণ্টন নিশ্চিত করে দামের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে ও দ্রুত শিল্পায়ন নিশ্চিত করে।
এতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে সহায়তা করতে সড়ক, রেল, সেতু, নৌপথ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও টেলিযোগাযোগ খাতে চলমান সরকারি বিনিয়োগ বজায় রাখবে ও সম্প্রসারণ করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নতুন সড়ক নির্মাণ, পুরাতন সড়ক সংস্কার, ফ্লাইওভার/ওভারপাস, সেতু/কালভার্ট নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এই বিভাগ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোকে চার বা ততোধিক লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, মধ্যবর্তী মেয়াদে সব জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার এবং অন্যান্য মহাসড়কগুলোকে প্রশস্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং অনলাইন কর ও অন্যান্য ফি আদায়।
সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সেতু বিভাগের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে- রাস্তা, সেতু ও নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ করা এই বিভাগের অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম।
বাস্তবায়িত বা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এমন অন্যান্য প্রকল্প হলো- ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’, ঢাকা সাবওয়ে ও ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
বাংলাদেশের সব অঞ্চলকে সংযুক্ত করে দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রেলপথের সম্প্রসারণ, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার, রেলপথকে ডুয়েলগেজ ও ডাবল লাইনে রূপান্তর, স্থগিত রেলস্টেশন নতুন ও পুনরায় চালু করা, নতুন ট্রেন চালু ও ট্রেন পরিষেবা সম্প্রসারণ, ট্রেনের কোচ সংগ্রহের কাজ চলছে।
পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকার ২০১৬-৪৫ সালব্যাপী ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং ঢাকা-পায়রা দ্রুত গতির ট্রেন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-গুন্দুম রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
নথিতে বলা হয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে নৌপথের নাব্যতা বজায় রাখা, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌপথ, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ।
এতে বলা হয়েছে, মধ্যবর্তী মেয়াদে নদীগুলোতে ব্যাপক খনন করা হবে।
১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীতে খনন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সহজ ও নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা এক কোটি ২০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ের ক্ষমতা সাড়ে ১০ হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়েছে এবং তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে।
মধ্যবর্তী মেয়াদে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের মান ও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি