May 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 27th, 2022, 9:46 pm

পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় কমানো যাচ্ছে না সরকারি ভবনগুলোতে এসির ব্যবহার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের অধিকাংশ সরকারি ভবনই পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় সারাবছরই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ভবনগুলোতে বিপুলসংখ্যক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র জনস্বাস্থ্যের হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের এসি ব্যবহারের পরিপত্র বাস্তবসম্মত না হওয়ায় যে যার মতো এসির সুবিধা নিচ্ছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি অফিসগুলো স্থাপত্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ভবনই যে যার মতো তৈরি করছে। ফলে একই নকশা ও পরিবেশবান্ধব ভবন তৈরি করা যায়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী জমির স্বল্পতা ও ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য স্থপতিদের প্রতি একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আধুনিক এই সময়েও দেশের বেশিরভাগ অফিস আবদ্ধ ভবনে হয়েছে। বসানো হয়েছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। কিছু কিছু ভবন পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না রেখেই করা হয়েছে। কোথাও নেই সবুজ। নেই ফাঁকা জায়গা, পার্ক কিংবা মাঠ। মূলত পরিবেশবান্ধব ভবনের জন্য যে উপাদান থাকা প্রয়োজন সেগুলো সরকারি ভবনগুলোতে নেই। বরং সরকারি ভবনগুলো যেনতেনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনেক সরকারি অফিস গড়ে ওঠেছে। ওই এলাকায় কপিরাইট ভবন, জাতীয় রাজস্ব ভবন. পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, নির্বাচন কমিশন ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, ডাক ভবন, এলজিইডি ভবন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, জিটিসিএল ভবন, সিপিটিউ ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি এসির ব্যবহার বেশি হওয়ায় আশপাশে তাপমাত্রা বেড়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ভবনের আশপাশে খোলা জায়গা ও সূর্যের আলো থাকা বাঞ্ছনীয়। ভবন পরিবেশবান্ধব করতে পারলে বিদ্যুৎ অনেকটাই সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু এদেশে ইউরোপ-আমেরিকার আদলে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে। সরকারি দপ্তরগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। অথচ গ্লাসের সঙ্গে লুবার ও জানালা খোলা গেলে বছরের ৭ থেকে ৮ মাস এসি ছাড়াই চলা যাবে। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ের জন্য সচেতনতা ও সরকারের অনুশাসন প্রয়োজন।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি ভবন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে নকশা তৈরির স্থাপত্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি ও বিদেশি কনসালট্যান্টদের পরামর্শ নিয়ে ভবন করা হচ্ছে। আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ও ডাকসহ একাধিক ভবন বেসরকারি ও বিদেশি পরামর্শক কাজ করেছে। অথচ দেশের পরামর্শকরা এদেশের আবহাওয়া সম্পর্কে ভালো জানার কারণে তাদের দিয়ে নকশা করা হলে আরো সুফল পাওয়া সম্ভব হতো।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি অফিসে এসি ব্যবহারের প্রাপ্যতা নির্ধারণ করে। এ-সংক্রান্ত পরিপত্র মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, অধিদপ্তর, দপ্তর ও পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য জারি করা হয়েছে। পদের ক্ষেত্রে শুধু সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, সহকারী সচিব ও প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের পদ উল্লেখ করা রয়েছে। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর ওসব পদের গ্রেড অনুযায়ী অন্য কর্মকর্তাদের এসি ব্যবস্থা করে। তাতে মাঠ প্রশাসনের ও দপ্তর-অধিদপ্তরের যে যার মতো এসির সুবিধা নিচ্ছে। অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। আবার অনেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেও এসি সুবিধা পাচ্ছে না। সরকারের উচ্চপদস্থ হলে বেশি গরম আর নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের কম গরম বিষয়টি এমন হওয়া যথাযথ নয়। বরং কাজের ধরন অনুযায়ী এসি ব্যবহারের নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। কনফারেন্স, মিটিং রুম, গোপনীয় ও অ্যাকাউন্স শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের এসি থাকতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আসিফুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিপিপিতে যেভাবে বলা হয় স্থাপত্য অধিদপ্তর সেভাবেই কাজ করে। সেখানে স্থাপত্য অধিদপ্তরের বেশি কিছু করার থাকে না। কোনো কিছু পরিবর্তন করলেও আবার তার অনুমোদন নেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে ইউটিউবের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নকশা দেখে সেভাবেই কাজ করে চায়। তাতে স্থপতিদের নিজেদের কিছু করার থাকে না।