সিলেট অফিস:
প্রকৃতিকন্যা হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই সিলেট তাই বরাবরই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। খানিকটা লম্বা ছুটি হলেই সিলেটে ভিড় জমে পর্যটকদের। এবার বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে তিনদিনের ছুটিতেও ব্যতিক্রম নয়, বরঞ্চ অন্যবারের চেয়ে এবার পর্যটক সমাগম বেশিই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চা-বাগান, পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলের স্রোতধারা দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে এসে ভীড় জমিয়েছেন। সিলেট শহর ও শহরতলির কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা দেখা গেছে। সিলেটের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা জাফলং, লালাখাল, শ্রীপুর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় এখন হাজার হাজার পর্যটক। সিলেটে যতো পর্যটক আসেন, তিনি যে ধর্মাবলম্বীরই হোন না কেন, অন্তত একবার হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) এর মাজারে ঢুঁ মারার চেষ্টা করেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মাজারে গিয়ে শত শত পর্যটকের দেখা মেলে। পুরো দিনকে কাজে লাগাতে সকালে মাজার ঘুরে অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রে ছুটছিলেন তারা। আলাপকালে ঢাকা থেকে আসা জাফরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘তিনদিনের ছুটি পেয়ে বৃহস্পতিবারই সিলেটে এসেছি। মাজার দেখে বিছানাকান্দিতে যাচ্ছি। শনিবার আরো দু-একটি পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে রাতে ফিরে যাবো।’
সিলেট শহরতলির লাক্কাতুরা এলাকাস্থ পাহাড়-টিলা ও চা বাগান পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শুক্রবার বিকালে এ এলাকায় গিয়ে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লা থেকে আসা বিউটি সাবিনা আক্তার বলেন, ‘স্বামী ও দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে পৌঁছে জাফলং ও শ্রীপুর ঘুরে দেখি। শুক্রবার সকালে সাদাপাথর দেখে মাজার ঘুরে চা বাগানে এসেছি। শনিবার আরো কয়েকটি স্পট ঘুরবো।’
এদিকে, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা ব্যাপক খুশি। তারা বলছেন, গত প্রায় দুই বছরে করোনার থাবায় সিলেটের পর্যটন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। পর্যটকের আনাগোনা কম থাকায় এ খাত পড়েছিল হুমকির মুখে। কিন্তু এবার বিজয় দিবসের ছুটিতে যতো পর্যটক এসেছেন, তাতে এ খাত এগিয়ে যেতে নতুন গতি পাবে। এ ছাড়া পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট মালিক ও চালক, বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের নৌকার মাঝিরাও পর্যটক সমাগমে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, ‘টানা তিনদিনের ছুটি পাওয়ায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই সিলেটের অধিকাংশ আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় তাদের জায়গা দিয়ে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেল। সিলেটে পর্যটন এতে নতুন গতি পাবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের নিরাপত্তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনা থাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি