অনলাইন ডেস্ক :
টানটান উত্তেজনা। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের প্রায় সব দর্শক দাঁড়িয়ে। ২ বলে প্রয়োজন ৭ রান। পারবেন বাবর আজম? না, ম্যাচ জয়ের জন্য নয়, তার সেঞ্চুরির জন্য। পারলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। দারুণ দুটি শটে মারলেন দুটি বাউন্ডারি, স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক। প্রথম ইনিংসের এই উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও ছিল না ম্যাচের শেষ ওভারে। হারিস রউফের দারুণ বোলিংয়ে জয় এর আগেই চলে যায় নিউ জিল্যান্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে! দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শনিবার রাতে ৩৮ রানে জিতেছে পাকিস্তান। ১৯২ রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ড থেমেছে ১৫৪ রানে। এই জয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে পাকিস্তান। এতে বড় অবদান বাবরের। ৫৮ বলে ১১ চার ও তিন ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার দ্বিতীয় পঞ্চাশ আসে কেবল ২২ বলে। স্বাগতিকদের অনায়াস জয়ে বড় ভূমিকা ছিল রউফেরও। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গতিময় এই পেসার নেন ৪ উইকেট। প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৮ রানে, এবার লেগেছে ২৭ রান। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে লড়াই করেন কেবল মার্ক চাপম্যান। ৪০ বলে চারটি করে চার ও ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর। আগের ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ফেরা দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান গড়েন ৯৯ রানের জুটি। এতে অগ্রণী ছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান। ৩২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে শুরুর জুটির রান, সেখানে তার অবদান ছিল ২৭। একই ছন্দে এগিয়ে গিয়ে ৩২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তান তোলে ৫৯ রান। ১০ ওভারে বাবর ও রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৯৮ রান। পঞ্চাশ ছুঁয়েই রিজওয়ানের বিদায়ে একাদশ ওভারে ভাঙে শুরুর জুটি। এই কিপার ব্যাটসম্যান ছয় চার ও এক ছক্কায় ৩৪ বলে করেন ৫০। অমন শুরুর জুটির পর দুইশ রান অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু এরপর ছোটখাটো এক ধসে পথ হারাতে বসেছিল পাকিস্তান। ৬ রানের মধ্যে রিজওয়ানসহ ফেরেন চার ব্যাটসম্যান। ফখর জামান ও সাইম আইয়ুব খুলতে পারেননি রানের খাতা। ২ রান করে কট বিহাইন্ড হন ইমাদ ওয়াসিম। বিনা উইকেটে ৯৯ থেকে পাকিস্তানের স্কোর পরিণত হয় ১০৫/৪-এ। সেখান থেকে স্বাগতিকদের কক্ষপথে ফেরান বাবর ও ইফতিখার আহমেদ। ৩৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বাবর বাড়ান রানের গতি। অধিনায়ককে দারুণ সঙ্গ দেন ইফতিখার। তাদের জুটিতে পঞ্চাশ আসে কেবল ২৮ বলে। ১৯তম ওভার শেষে বাবরের রান ছিল ৮৪। প্রথম বলে তিনি সিঙ্গেল নিলে মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরির সুযোগ বুঝি শেষ। কিন্তু পরের বলেই ইফতিখার প্রান্ত বদল করলে স্ট্রাইক পান পাকিস্তান অধিনায়ক। দারুণ এক শটে জেমস নিশামকে ছক্কা মেরে পৌঁছান নব্বইয়ের ঘরে। পরের বলে দুই রান নিয়ে ধর রাখেন স্ট্রাইক। সেঞ্চুরির জন্য তখনও দরকার ছিল ৭ রান। বাবার টানা দুটি চার মেরে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের কাক্সিক্ষত সীমানায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাবরের তিনটির বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল ভারতের রোহিত শর্মার (চারটি)। অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিতে ইফতিখারের অবদান তিন ছক্কা ও এক চারে ১৯ বলে ৩৩। রান তাড়ায় সেভাবে কখনও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। দুই ওপেনার টম ল্যাথাম ও চ্যাড বাওয়েস টিকে ছিলেন অনেকটা সময়। কিন্তু রানের গতিতে দম দিতে পারেননি কেউই। ল্যাথাম ১৯ রান করতে খেলেন ২০ বল, বাওয়েস ২৬ রান করেন ২৪ বলে। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সফরকারীদের নাড়িয়ে দেন রউফ। দুই অঙ্কে যেতে দেননি উইল ইয়াং, ড্যারিল মিচেল, জেমস নিশাম ও রাচিন রবীন্দ্রকে। অন্য প্রান্তে নিয়মিত সঙ্গী হারালেও নিজের মতো করে শট খেলে যান চাপম্যান। ৩০ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। অন্য প্রান্তে কেউ সেভাবে সঙ্গ দিতে না পারায় দেড়শ ছাড়িয়েই থেমে যায় সফরকারীদের ইনিংস। আগামী সোমবার একই মাঠে সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৯২/৪ (রিজওয়ান ৫০, বাবর ১০১*, ফখর ০, আইয়ুব ০, ওয়াসিম ২, ইফতিখার ৩৩*; হেনরি ৪-০-২৯-২, শিপলি ৩-০-৩৯-০, লিস্টার ৪-০-৪১-০, নিশাম ৪-০-৪৮-১, রবীন্দ্র ৪-০-২২-১, ম্যাকনকি ১-০-৯-০)
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৪/৭ (ল্যাথাম ১৯, বাওয়েস ২৬, ইয়াং ৯, চাপম্যান ৬৫*, মিচেল ৯, নিশাম ১, রবীন্দ্র ৫, ম্যাকনকি ১২, শিপলি ১*; আফ্রিদি ৪-০-২৫-০, ওয়াসিম ৩-০-১৯-১, জামান ৪-০-৩০-১, রউফ ৪-০-২৭-৪, শাদাব ৩-০-২৭-১, ফাহিম ২-০-২৩-০)
ফল: পাকিস্তান ৩৮ রানে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা