অনলাইন ডেস্ক :
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সাহায্যের ডাক আরও জোরালো হচ্ছে। দেশটির সাহায্য দরকার, আর তা দরকার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। খবর বিবিসির। জাতিসংঘ ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোদি এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানের এই খারাপ সময়ে জলবায়ু দুর্যোগটি না এলেও পারত, যখন দেশের অর্থনীতি বাড়তে থাকা ঋণ, ঋণ পরিশোধে অর্থের সঙ্কট ও অব্যাহত মূল্যস্ফীতি নিয়ে সংগ্রাম করছে।’ তিনি আরও জানান, যদি দেশটিকে ঋণ ছাড় দেওয়া না হয় তবে অর্থনীতি আরও বড় সঙ্কটে পড়বে। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় পাকিস্তানের বিশাল এলাকা ডুবে যায়। ভয়াবহ এই বন্যায় দেশটিকে ১৫ শ’র মতো লোক মারা যায় আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। চরম বিপর্যয়কর আবহাওয়ার কারণে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল, গবাদিপশু, জীবন-জীবিকা বন্যার তোড়ে ভেসে যায়। প্রলয়ঙ্কারী এই বন্যায় দেশের অর্থনীতিতে এক-চতুর্থাংশ অবদান রাখা কৃষিখাত পড়েছে মারাত্মক সঙ্কটে; টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বন্যায় প্রায় আট লাখের মতো গবাদি পশু মারা গেছে যা ছিল গ্রামীণ জনপদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। আর এখন যে গবাদি পশুগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর জন্য খাবারও যোগাড় করতে পারছে না লোকজন। পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী শেরি রেহমানের মতে, বন্যায় পেঁয়াজের ৭০ ভাগ ফলনসহ চাল ও অন্যান্য শস্য ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ; যার প্রধান বাজার আফ্রিকা মহাদেশ ও চীন। প্রায় প্রতিটি ঘরে রুটির প্রচলন থাকলেও এবার গম চাষেও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। করোনা অতিমারির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাঘাত ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ছে দেশটিতে। এদিকে, বন্যার আগেই পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বেশকিছু পণ্য পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারকে এবার খাদ্যের পাশাপাশি শিল্প উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সঙ্কটের আগে থেকেই পাকিস্তানে ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট। এ ছাড়া তুলা উৎপাদনকারী এই দেশটিকে এবার টেক্সটাইল শিল্পের জন্য তুলাও আমদানি করতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল রোববার বলেন, বন্যার কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সরকার ব্যর্থ হবে না। বাইরে থেকে আসা অর্থের উৎস নিশ্চিত করা গেছে; যার মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে আসছে ৪ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসছে। একই সময়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে সৌদি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা দিয়ে ডিসেম্বরে এক বছরের ঋণ পরিশোধ করা যাবে। গত রোববার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানায়, তারা পাকিস্তানে ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করবে। গত মাসে আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য ‘বেইলআউট প্যাকেজ’ অনুমোদন করে। তবে এতে কর বাড়ানোসহ কৃচ্ছ্রতার বিষয়ে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংসের বিশ্লেষক এন্ড্রু উড বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্বল মুদ্রা আর সঙ্কুচিত আর্থিক অবস্থায় জর্জরিত পাকিস্তানের অর্থনীতি। দেশটির ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৭৪ শতাংশের কাছাকাছি। পাকিস্তানে গত ৩০ বছরের গড় বৃষ্টিপাতের মধ্যে গত জুলাই ও আগস্ট মাসেই শতকরা ১৯০ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণের প্রদেশ সিন্ধুতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ওই সময়ের শতকরা ৪৬৬ শতাংশ বেশি। অপরদিকে, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস পাকস্তান সফর করেন। এ সময় তিনি এই বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে জানান, সঙ্কট কাটাতে পাকিস্তানের ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। বন্যার পর জনস্বাস্থ্যের জন্য তৈরি হওয়া সঙ্কট কাটাতে সাহায্য সংস্থাগুলো যখন হিসেব-নিকেষ করছে, তখন দেশটির আবহাওয়া বিভাগ সামনের দিনগুলোতে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে; যা ঘরবাড়ি হারা মানুষের জীবনকে আরও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি করেছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু