পাট ও বস্ত্র এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিশ্বব্যাংককে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্য অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব এবং দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ। একটা সময় ছিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত ছিল পাট। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে এ ধারায় কিছুটা ছেদ পড়লেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়রোধে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ ও জুট জিও টেক্সটাইল বহুমুখী পাটপণ্য ইত্যাদি উদ্ভাবনের ফলে দেশে-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৭০ ভাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি খাত।
এম সাখাওয়াত বলেন, আমাদের ২৫টি সরকারি পাটকল ও ২৫টি বস্ত্রকল উৎপাদন কার্যক্রম কয়েক বছর পূর্বেই বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে মিলগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের শিল্প কারখানাগুলো কৌশলগতভাবে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। সে কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত সহজে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প ক্রমশ উন্নতি করছে।
বিশ্ব বিখ্যাত মসলিন কাপড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মসলিন কাপড় একসময় জগৎ বিখ্যাত ছিল। সরকার মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলিন কাপড় তৈরির সুতা তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, জাহাজ নির্মাণ দেশের একটি সম্ভাবনাময় ও ক্রমবিকাশমান শিল্প। স্থানীয়ভাবে তৈরি জাহাজ রপ্তানি করার মাধ্যমেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ নির্মাণ প্রধান প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংক দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক অঙ্গীকারাবদ্ধ। দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করায় আবদৌলায়ে সেক উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
এসময় তিনি বলেন, পাট, বস্ত্র, শিপিংসহ সব সেক্টরেই নতুন নতুন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং উপদেষ্টা চলমান প্রকল্পগুলোকে যথাসময়ে সমাপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকসহ মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি