March 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 7th, 2023, 7:31 pm

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে। মূলত ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং অনাবৃষ্টির কারণেই পানির স্তর নিচে নামছে। টানা অনাবৃষ্টির ফলে ভূগর্ভস্থ পানির পর্যাপ্ত পূরণ হচ্ছে না। আর ভূ-উপরিভাগের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়সহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভূগর্ভে পানি যায় না। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর খুব দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার দেশজুড়ে আগেভাগেই খরা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিএডিসি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে অনেক এলাকায়ই চাষাবাদে ভূ-উপরিভাগের স্বাভাবিক পানি মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অঞ্চল ভেদে পানির স্তর ইতোমধ্যে ৪ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। যশোরে এ বছর মাঘ মাসের শুরুতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এমনিতে ওই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি ওঠে না। এবার ওই পানির স্তর এখনই ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। খুলনা এলাকাতেও পানির স্তর ৫ থেকে ৬ ফুট নিচে নেমে গেছে। তাছাড়া দেশের ভাটি অঞ্চল অর্থাৎ হাওর এলাকা সুনামগঞ্জেও পানির স্তর ৪ ফুটের মতো নিচে নেমেছে। সূত্র জানায়, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। দেশের কৃষিব্যবস্থা এখন প্রধানত সেচনির্ভর। নদী-নালা ও খালে-বিলে পানি না থাকায় পাওয়ার পাম্পে নদী-নালার পানিতে সেচ এখন নেই বললেই চলে। ফলে নদী ও খাল-বিলের পাড়েও গভীর নলকূপ বসেছে। খাবার পানিও গভীর নলকূপে অথবা সাবমার্সিবল পাম্পে উঠছে। সারাদেশে বোরো মৌসুমে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৪টি সেচযন্ত্র ব্যবহার হয়। ওসব সেচযন্ত্র দিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে মাটির নিচের পানির স্তরে চাপ পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির উৎস যেমন কমছে, তেমনি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে কৃষিখাত। বর্তমানে বোরো মৌসুম চলছে। বোরো আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবার কৃষকের সেচ খরচ অনেক বাড়বে। তাছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। সূত্র আরো জানায়, ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর অবিশ্বাস্য হারে নিচে নামছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১২৪টি উপজেলা নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। ওই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রেকর্ড পরিমাণে ১৫০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বেশির ভাগ হস্তচালিত নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। আর গভীর নলকূপগুলোতে ঠিকমতো পানি উঠছে না। অথচ একযুগ আগেও ওই অঞ্চলে ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যেত। বর্তমানে কোথাও কোথাও ১৫০ ফুট বা তারও নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের গড় বৃষ্টিপাত ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটার হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতে ভূগর্ভস্থ পানির গড় পুনর্ভরণের হার দেশে ২৫ শতাংশ হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে মাত্র ৮ শতাংশ। যে কারণেও বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু এলাকাগুলোতে পানির সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পানি বিশষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর পূর্ণ হচ্ছে না। ফলে ভূগর্ভের পানি দিন দিন শুধু কমছেই। মূল অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতি মাত্রায় নলকূপ বসিয়ে ইচ্ছামতো পানি তুলে ফেলায় এমন অবস্থা হয়েছে। এখন আর পানি নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল ধীরে ধীরে মরুকরণের দিকে যাচ্ছে আর দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে। পরিবেশের এক বিরাট ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। অতিমাত্রায় লবণাক্ত পানি মৎস্য সম্পদ ও উপকূলবর্তী কৃষি সম্পদেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। তাছাড়া ভারতের ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ওই বাঁধের কারণে এ দেশের নদ- নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। ফলে নদীগুলো শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ছে এবং মরুকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। আর পানি প্রবাহ না থাকায় পলি জমে নদীতল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানির চাপ সহ্য করতে না পারায় প্রায়ই দেখা দিচ্ছে বন্যা। শুকনো মৌসুমে হ্রাসকৃত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকার কৃষিক্ষেত্র মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নদ-নদী, খাল-বিল অর্থাৎ পানির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণ করতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ করে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে এবং প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে।