নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। আর এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করার করলেও তাদের আবাসন, পরিবহন, গ্রন্থাগার ও গবেষণাগারসহ সব সেবা বাবদ ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ ওই সময়ে শিক্ষার্থীরা ওসব কোনো সেবাই গ্রহণ করেনি। শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রাইভেট টিউশন ও খ-কালীন চাকরি করে তাদের পড়ার খরচ পরিশোধ করতো। কিন্তু করোনার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই ওসব আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের হারে ফি আরোপ করায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার কারণে বিগত ১৫ মাস ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন সেবার বাইরে রয়েছে। কিন্তু তারপরও একেকজন শিক্ষার্থীকে হল ভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা হারে সিট ভাড়া দিতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় বন্ধ ছিল পরিবহন ব্যবস্থাও। কিন্তু ওই সেবার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দিতে ১ হাজার ৮০ টাকা করে হচ্ছে। একইভাবে কোনো সেবা গ্রহণ ছাড়াই অনুষদ ভেদে বিভিন্ন হারে গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার কিংবা ব্যবহারিক ফি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার কোনো কোনো অনুষদ সশরীরে পরীক্ষা না নিয়েও কেন্দ্র ফি নিচ্ছে। দেশেকরোনা শনাক্তের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ এতোদিন বহাল থাকবে তা কেউই আগে ভাবতেই পারেনি। সেজন্য বন্ধ থাকা আবাসিক হলের কক্ষ থেকে জিনিসপত্র নিতে ছুটির মধ্যেও অনেককেই হলে আসতে হয়েছে। ওই সময় হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে আবাসন ফির বকেয়া পরিশোধ করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি করোনা মহামারীতে স্থগিত কিংবা জটের মধ্যে পড়া অসমাপ্ত পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। আর পরীক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ফরম পূরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে। অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো চবিতেও পরিবহন, চিকিৎসা, স্কাউট, ক্যান্টিন, আবাসনসহ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সব সেবাই এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় ওসব সেবার জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ফি আদায় করছে। শিক্ষার্থীদের বেতন, রেজিস্ট্রেশন ফির পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছ থেকে গ্রন্থাগার ফি বাবদ ২২৩ টাকা, পরিবহন ফি ৫৭৯, চিকিৎসা ফি ৬১, আবাসিক হলের সিট ভাড়া বাবদ ৪৪০, সংস্থাপন খরচ ৪৪০, বাসন-কোসন ফি ১৬৫, গ্রন্থাগারের কার্ড ফি ৩০, বিএনসিসি ফি ৪০, উৎসব ফি ২৪ ও রোভার স্কাউট ফি ২২ টাকা আদায় করা হয়েছে। তাছাড়া করোনার সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের উন্নয়ন ফি বাবদ রসিদবিহীন ২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ গত দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো সেবাই শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করেনি। অথচ করোনা মহামারীতে সেবা না নিয়েও শিক্ষার্থীদের ফি গুনতে হচ্ছে।
এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হলের সিট ভাড়া মওকুফের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। একইভাবে ভর্তি কিংবা পরীক্ষার ফরম পূরণের বিভিন্ন একাডেমিক সেবা নিতে এলে শিক্ষার্থীদের পরিবহন ও অন্য সেবা খাতের ফি আগের হারেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সব প্রতিষ্ঠানই কোনো না কোনোভাবে ক্রিয়াশীল রাখতে হয়। শিক্ষার্থীরা না থাকলেও সেগুলো ধরে রাখতে হয়, উন্নয়ন করতে হয়।
অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমনিতে খুব সামান্য পরিমাণ ফি নেয়া হয়। তারপর করোনার সংকটে কিছু শিক্ষার্থীর সংকট আগের তুলনায় প্রকট হয়েছে। তাই সাধারণভাবে কোনো ছাড় ঘোষণা না করলেও প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড় দিতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম