November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 11th, 2022, 7:32 pm

পাহাড়ি ‘ঝাড়ু ফুল’ যাচ্ছে মধ্যেপ্রাচ্যে

জাতীয়ভাবে বলা হয় ‘উলুফুল’, তবে স্থানীয় ভাষায় এটি ‘ঝাড়ু ফুল’ বা ‘ফুল ঝাড়ু’ নামে অধিক পরিচিত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এই ‘ফুল ঝাড়ু’ ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ঘরে ঘরে প্রতিদিনই ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিবছর ঝাড়ু ফুল দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

প্রাকৃতিক এ ‘ঝাড়ু ফুল’ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের বহু পরিবার। এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে পাহাড়ের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

জানা যায়, পাহাড়ে থেকে ‘ফুল ঝাড়ু’ কেটে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসে লোকজন। এরপর বাজার থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী ব্যবহারের জন্য সেগুলো কিনে নেয়। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাও স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ফুল ঝাড়ু কিনে নেন।

শীত মৌসুমে ‘ফুল ঝাড়ু’ উৎপাদিত হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। চাষাবাদ করতে শুধুমাত্র ঝোপঝাড় পরিস্কার ও ফাঁকা স্থানগুলোতে এর চারা লাগিয়ে দিলেই হয়। বাড়তি কোন যত্ন, সার, কীটনাশক কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না।

ইতোমধ্যে পাহাড় থেকে ঝাড়ু তৈরির জন্য ‘ঝাড়ুফুল’ কাটা শুরু হয়েছে। গহীন পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছে ‘ঝাড়ু ফুল’ সংগ্রহকারীরা। এ ফুল ঝাড়ু দেশের বড় বড় শহরে বিক্রির জন্য মজুদ করা হচ্ছে।

ফুল ঝাড়ুর ৮-১০টি কাঠি নিয়ে একটি বান্ডিল তৈরি করা হয়। বন বিভাগের ভাষায় এটির নাম ‘ভ্রুম’।

উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌরসদর, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, মগপুকুর, সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, বড়কুমিরা, মাজার গেট, জোড় আমতল, ফকিরহাট, বিশ্ববিদ্যালয় গেট, বারআউলিয়া, শুকলালহাট, সিরাজ ভুইয়ার রাস্তার মাথা, আনোয়ারা গেটসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি বাহারি ঝাড়ুফুল শুকাতে দেখা যায়।

তবে সীতাকুণ্ডের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বছরে কি পরিমাণ ঝাড়ুফুল উৎপাদিত হয় এবং কত একর পাহাড়ি জায়গায় এ বাগান আছে তার কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।

সোনাইছড়ি পাহাড়ে বসবাসকারী উপজাতি ঝাড়ুফুল চাষি মং তনচঙ্গা জানান, প্রতিবছর তার এলাকা থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার বান্ডিল ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ করে পাইকারী দামে বিক্রি করা হয়।

গুণগত মানভেদে কাটা হয় এবং আঁটি হিসেবে এসব ফুল ঝাড়ু বিক্রি করা হয়। তবে এগুলো কাটা এখন আর আগের মতো সহজ নয়।

কয়েক বছর আগেও পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার ধারে ফুল পাওয়া যেত। এখন অনেক ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ফুল ঝাড়ু কাটতে হয়। ফলে এখন দামও একটু বেশি।

স্থানীয়দের মতে, বিনি জাতের ফুল সবচেয়ে ভাল। ফলে বিনি জাতের ফুলের চাহিদা ও মূল্য অনেকটা বেশি। তবে একশ্রেণির প্রভাবশালী কর্তৃক নির্বিচারে বন নিধনের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় ফুল ঝাড়ুর বাণিজ্য। তাছাড়া নির্বিচারে পাহাড়ি বনজ সম্পদ নিধনের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ঝাড়ু ফুল।

সব কিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও কদর কমেনি ঝাড়ু ফুলের। পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গহীন পাহাড়ের টিলায় টিলায় একমাত্র সৃষ্টিকর্তার অবদানে কাশফুলের মতো এসব ফুল গাছ দেখা যায়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এই গাছে ফুল আসে। পাহাড়ে গিয়ে এ ফুল সংগ্রহ করে তারা। এতে বন বিভাগ থেকে বাধা দেয়া হয় না।

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় এসব ঝাড়ু ফুল বাড়ি বাড়ি নিয়ে যায় ত্রিপুরা নারীরা। ঝাড়ু ফুলের একটি স্টিক এক টাকা হারে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

ঝাড়ু ফুলের পাইকারী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম জানান, দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। ১৯৯৮ সালে প্রথম ঝাড়ু ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক ঝাড়ু ফুল রোদে শুকানো এবং ঝাড়ুর আঁটি বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ঝাড়ুর আটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় কিনে নেই। তারপর রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়ুর মোচা বানিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি।’

চট্টগ্রাম রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো অফিস সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশে ফুল ঝাড়ু রপ্তানি হয়। বিশেষ করে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ওমান ও দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বেশি রপ্তানি হয়। এক্ষেত্রে পাহাড়ি এলাকায় ফুল ঝাড়ুর উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছর রপ্তানি কমে এসেছে।

—-ইউএনবি