অনলাইন ডেস্ক :
ফাইনালের উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছে গেল শেষ ওভারে। জয়ের জন্য ইসলামাবাদের প্রয়োজন আট রান। প্রথম বলে মোহাম্মদ আলির ইয়র্কারে একটি রান নিয়ে সতীর্থ নাসিম শাহর ওপর একরকম ফুঁসে উঠলেন ইমাদ ওয়াসিম। তিনি চেয়েছিলেন ঝুঁকি নিয়ে হলেও দুটি রান নিতে। কিন্তু সঙ্গী সাড়া দেননি। পরের বলেই জবাবটা দিলেন নাসিম। দুর্দান্ত ফ্লিক শটে বল পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারিতে! চার বলে লাগে তখন তিন রান। সহজ সমীকরণ। ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বাই থেকে এলো একটি রান, চতুর্থ বলে আবার ইমাদের সিঙ্গেল। এর পরের বলেই দুর্দান্ত বাউন্সারে নাসিমকে বিদায় করে দিলেন আলি। ম্যাচে তখন চরম নাটকীয়তা। এক বলে এক রান।
শেষ বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও শট থার্ডম্যানের ফাঁক গলে চার মেরে দলকে জিতিয়ে দিলেন নাসিমের ছোট ভাই হুনাইন শাহ। বাঁধনহারা আনন্দের মাঠের ভেতর দিগ্বিদিক ছুটতে থাকলেন ইসলামাবাদের ক্রিকেটাররা। করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সোমবার রোমাঞ্চকর ফাইনালে মুলতান সুলতান্সকে ২ উইকেটে হারিয়ে এবারের পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) চ্যাম্পিয়ন ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। টুর্নামেন্টের প্রথম তিন আসরের দুটিতেই জয়ী দলটি পাঁচ আসর পর আবার পেল শিরোপার স্বাদ। সব মিলিয়ে রেকর্ড তিনবারের চ্যাম্পিয়ন তারাই। ঠিক উল্টো প্রান্তে মুলতান সুলতান্স।
২০২১ আসরের চ্যাম্পিয়নরা পরের টানা তিনটি ফাইনালেই হেরে গেল। গত আসরে তারা শেষ বলে এক রানে হেরেছিল রান তাড়ায়, এবার শেষ বলে হারল রান বাঁচানোর চেষ্টায়। শেষ ওভারে পার্শ্বনায়ক হলেও ইসলামাবাদের জয়ের মূল নায়ক অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। ক্ষুরধার বোলিংয়ে ২৩ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১৭ বলে অপরাজিত ১৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ৩৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মুলতানকে শুরুতেই ধাক্কা দেন ইমাদ। ম্যাচের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারে তিনি বিদায় করেন ইয়াসির খান ও ডেভিড উইলিকে।
সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও উসমান খান। তবে ২৬ বলে ২৬ করে রিজওয়ান আউট হন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শাদাব খানের বলে। মিডল অর্ডারে জনসন চার্লস, খুশদিল শাহরাও ভালো করতে পারেননি। এবারের আসরে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখানো উসমান অবশ্য জ্বলে ওঠেন ফাইনালেও। তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৫৭ রান। আটে নেমে ইফতিখার আহমেদ করেন তিনটি করে চার ও ছক্কায় ২০ বলে ৩২।
ইসলামাবাদ ২০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান। ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন ইমাদ, পিএসএলে যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। শাদাব খান নেন ৩২ রানে ৩ উইকেট। রান তাড়ায় ইসলামাবাদের ওপেনার কলিন মানরো আউট হন ১৩ বলে ১৭ করে। আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিল উপহার দেন ৩২ বলে ৫০ রানের ইনিংস। তবে আঘা সালমান ও শাদাব খান পারেননি টিকতে। পাঁচে নেমে ইনিংসকে কিছুটা গতি দেন আজম খান।
তার ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংসের পর ঝড় তুলতে পারেননি হায়দার আলি ও ফাহিম আশরাফ। তবে পেসার নাসিম শাহর ব্যাটে ফেরে দলের আশা। ১৬ বলে যখন প্রয়োজন ৩১ রান, ইফতিখার আহমেদকে ছক্কা ও চার মারেন নাসিম। ১৯তম ওভারে ক্রিস জর্ডানের বলে টানা দুটি চার মারেন ইমাদ। এরপর শেষ ওভারের ওই নাটকীয়তা। ৯ বলে ১৭ করে নাসিম আউট হন পঞ্চম বলে। তার ছোট ভাই হুনাইন দলকে জেতান চাপের মুখে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট চালিয়ে। ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সে ফাইনালের ম্যাচ-সেরা ইমাদ।
আসরে ৩০৫ রান করে ও ১৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট মনোনীত হন চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক শাদাব। ১১ ইনিংসে ৫৬৯ রান করে ‘হানিফ মোহাম্মদ ক্যাপ’ পান বাবর আজম। আসরে আর কোনো ব্যাটসম্যান ৪৩০ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার জেতেন উসমান খান। সাত ইনিংসে দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৪৩০ রান করেন তিনি ১০৭.৫ গড় ও ১৬৪.১২ স্ট্রাইক রেটে। ২৪ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির ‘ফাজাল মোহাম্মদ ক্যাপ’ পান উসামা মির। আসরের সেরা বোলারের খেতাবও পান এই লেগ স্পিনার। ৩৪৫ রান করে ও ৮ উইকেট নিয়ে ‘সুপার অলরাউন্ডার’ স্বীকৃতি পান সাইম আইয়ুব। টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার ইরফান খান নিয়াজি। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ১৪০ স্ট্রাইক রেট ১৭১ রান করে আসরের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারও ২১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা