জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রোজিনা বেগম (২৫) নামে এক পুত্রবধুকে শশুর ও স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চাউর হলে মুহুর্তের মধ্যে সেটি নেট দুনিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ১৭ এপ্রিল সোমবার উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রোজিনা বেগমের ভাই বাবুল মিয়া বাদি হয়ে বোনের শশুর শফিক মিয়া (৬৫), বোনের স্বামী আব্দুছ সালাম (৩২) ও দেবর রুমান মিয়া (২৮) কে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা (মামলা নং-২০) দায়ের করেছেন। পুলিশ পুত্রবধুর স্বামী আব্দুছ সালামকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটের সময় কুলাউড়া থানার ওসি মোঃ আব্দুছ ছালেকের নেতৃত্বে এসআই হারুনুর রশীদ, এএসআই তাজুল ইসলামসহ পুলিশের একটি টিম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার উত্তর মুলাইম এলাকা থেকে পুত্রবধুর শশুর শফিক মিয়াকে আটক করে।
মামলার এজাহার ও সরেজমিনে এলাকায় গেলে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র আব্দুছ সালামের সাথে পাশ্ববর্তী কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের আব্দুল খালিকের মেয়ে রোজিনা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে মাহি মিয়া (৩) নামে একটি পুত্র রয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল রাতে যৌতুকের দাবিতে শরবতের প্যাকেট ছেড়ার অজুহাতে রোজিনাকে মারধর করেন স্বামী সালাম ও দেবর রুমান। পরদিন বিকেলে স্বামী সালাম ও শশুরবাড়ির লোকজন ১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আবারো রোজিনাকে নির্যাতন শুরু করেন। রুজিনা ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পাশর্^বর্তী প্রতিবেশী জোস্না বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ইফতারের আগ মুহুর্তে রুজিনার শশুর শফিক মিয়া ও স্বামী সালামসহ শশুশবাড়ির লোকজন জো¯œা বেগমের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক তাঁকে (রুজিনাকে) টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় শফিক মিয়া পুত্রবধূ রুজিনাকে নির্যাতন করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। এসময় প্রত্যক্ষদর্শীরা সেটির ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দিলে সেটি মুহুর্তের মধ্য ভাইরাল হয়। পরে রাতে পুলিশ গিয়ে রুজিনাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। আহতবস্থায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুজিনার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাড়ির (জোস্না বেগমের বাড়ি) ভিতর থেকে টেনে হিচড়ে গূহবধূ রুজিনাকে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ শশুর শফিক মিয়া। সাথে রয়েছেন তাঁর শাশুড়ী দরিদা বেগম, শিশুপুত্র মাহি, তাঁর স্বামী সালামসহ একাধিক স্থানীয় লোকজন। রুজিনার আর্তচিৎকারে কেউ তাঁকে শশুরের হাত থেকে উদ্ধারে জন্য যাননি। শিশুপুত্র মাহি পিতার কোলে থাকাবস্থায় মায়ের প্রতি এমন অমানবিক নির্যাতন দেখে কান্না শুরু করে।
রুজিনার ভাই বাবুল মিয়া বলেন, আমার বোনকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে যৌতুকের জন্য নানা অজুহাতে নির্যাতন করে আসছিলো। যৌতুকের কারণে শশুর শফিকসহ সবাই তাকে নির্যাতন শুরু করলে আমার বোন আত্মরক্ষার্থে জোস্না বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বোনের শশুর শফিক প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতন ও রাস্তা দিয়ে টেনে হিচড়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় তাদের পরিবারের সবাই সাথে ছিলো। পরে তাদের প্রতিবেশী একজন আমার মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
রোজিনার শাশুড়ী জরিদা বেগম বলেন, ঘটনার আগের দিন রাতে আমার স্বামী বাজার করে নিয়ে আসেন। এসময় বাজারের প্যাকেট থেকে আমার নাতি রিহান শরবতের একটি প্যাকেট ছিড়ে ফেলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলের বউ রোজিনা ছোট্ট নাতি রিহানকে মারধর করে। বিষয়টি আমার স্বামী ও ছেলে সালাম তাকে জিজ্ঞেস করলে সে তাদের সাথে অশোভন আচরণ শুরু করে। পরে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে সিএনজিতে উঠে চলে যায়। পরে আমার স্বামী তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় পুত্রবধু রুজিনার ভাই বাবুল বিষয়টি আমাদেরকে জানান। পরে থানার এসআই হারুনুর রশীদ গৃহবধুর শশুরবাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হলে মামলার ২নং অভিযুক্ত ও গৃহবধুর স্বামী সালামকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শশুর শফিক মিয়াকে বিকেলে মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
সাবেক এমপি সুজনের জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ