April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 2nd, 2021, 8:35 pm

পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম: সরানোর জন্য অপেক্ষা শিল্পপার্কের

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এখন থেকে প্রায় এক যুগ আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী ও ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হন ১৯৫ জন। পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের হৃদয়বিদারক ছবি তখন পুরো দেশকেই কাঁদিয়েছিল। এতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম নিয়ে। প্রথম ঘটনার পরই সরকার দ্রুত এসব রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় ঘটনার পর সরানোর কাজে তাগাদা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রথম দফায় ঘোষণার প্রায় এক যুগ হতে চললেও তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বহাল তবিয়তে রয়েছে ছোট-বড় এসব রাসায়নিক গুদাম। নামে-বেনামে বা সাইনবোর্ড সরিয়ে রেখে আগের মতোই চলছে রাসায়নিকের ব্যবসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানকার কারখানা সরিয়ে নিতে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে রাসায়নিক শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজ চলছে, যা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হতে পারে। শিল্পপার্কটি হলে গুদামগুলো স্থায়ীভাবে পুরান ঢাকা থেকে সরানো যাবে। জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাসায়নিক গুদাম-কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়। গুদামগুলোর পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। এতে বন্ধ ছিল গুদামগুলোর কাজ। কিন্তু কিছুদিন পরই আগের অবস্থায় ফিরে যায় এসব রাসায়নিক গুদাম। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত বছর পুরান ঢাকায় কতটি রাসায়নিক গুদাম, কারখানা বা দোকান রয়েছে তা খুঁজে বের করতে দায়িত্ব দেয় ডিএসসিসিকে। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রায় দুই হাজার গুদামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে জমা দেয়। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, আরমানিটোলা, চকবাজারসহ বেশকিছু এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম এখনও রয়েছে। আগের মতোই কর্মব্যস্ততা দেখা যায় সেখানকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শ্রমিকদের মাঝে। তবে নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের নাম মুছে দিয়ে বা গুদাম ও কারখানায় সাইনবোর্ড ছাড়াই ব্যবসা করছেন অনেকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে ঠিকানা বদল করে। চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর সমালোচনার মুখে সাময়িকভাবে গুদাম সরাতে কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গিতে দুটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। দুটি প্রকল্পই এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও আড়াই বছরেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। অন্যদিকে গোডাউনগুলো স্থায়ীভাবে সরিয়ে নিতে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কেমিক্যাল শিল্পপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। একনেকে ২০১৯ সালের ১০ জুন কেমিক্যাল শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। তখন মাটি ভরাটসহ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এরপর করোনা মহামারি ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় কাজে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে এখন সেই কাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মো. মোশতাক হাসান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, এখন দ্রুত কাজ চলছে। পুরো প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে পার্ক চালু করতে পারবো বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল ১০ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে স্বরাষ্ট্র, শিল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। ওই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে জানায়, পুরান ঢাকায় চার হাজারের বেশি রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। ২০১১ সালের ২০ জুলাই গঠিত কমিটি প্রতিবেদন আকারে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেয়। ওই সুপারিশে বলা হয়, কেরানীগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর পাশে ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে, সেখানে ৭ তলাবিশিষ্ট ১৭টি ভবন নির্মাণ করে তাদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। এরপর ২০১৫ সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বিসিক এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা খরচ করে। ওইসব ভবন নির্মাণের পর রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা নানা টালবাহানা করতে থাকে। পরে তারা জানান, তাদের প্লট দিতে হবে। পরে তিনটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বিসিকের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর ভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে ৩১০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে বিসিক। সেখানে আরও ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে মাটি ভরাট, সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।