November 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 26th, 2023, 9:49 pm

পূরণ হচ্ছে না সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহে চালকল মালিক ও কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে না। মূলত সরকার বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তারা ধান খোলাবাজারেই বিক্রি করছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এক মণ ধানের দাম ১ হাজার ১২০ টাকা। কিন্তু আমন মৌসুমের ধান খোলাবাজারে কৃষকরা বিক্রি করেছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। তাছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে বাড়তি পরিবহন খরচ, বিক্রয়ে অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতাও রয়েছে। ফলে অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে চলতি আমন মৌসুমে সরকারের ৩ লাখ টন ধান ও ৫ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু করে এবং আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৩ টন চাল সংগ্রহ হলেও একেবারেই তলানিতে ধান সংগ্রহ। এ বছর সরকারিভাবে ধানের ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা আর চালের ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অনাবৃষ্টির কারণে চলতি বছর আমন মৌসুমে কিছুটা দেরিতে আবাদ হয়। ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে শতভাগ জমির আমন ধান। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ শতাংশেরও বেশি ফলন হয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারিভাবে ধান চাল-সংগ্রহ অভিযান সফলতা দেখছে না। দুই মাসেরও অধিক সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দশমিক ৭৪ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার খাদ্যের মজুদ ঠিক রাখতে কৃষক থেকে ধান কিনলেও চাল সংগ্রহের জন্য মিলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে। ওই লক্ষ্যে এবার শুরুতে মিলগুলোর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ওই সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা শেষে মাত্র ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৪ টন চালের চুক্তি হয়েছে এবং ৬ হাজার ৮৯৫টি মিল চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। মিলগুলোর সঙ্গে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ শতাংশ চালের চুক্তি হয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা চাল সরবরাহে গড়িমসি করছে। তাদের মতে, সরকারি মূল্যে সরকারকে চাল দিতে গেলে লোকসানে পড়তে হয়। কিন্তু কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে মিলগুলোকে বাধ্য হয়েই সরকারের চাল সংগ্রহ চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে চাল সরবরাহে মিলারদের বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর এ মুহূর্তে ইনসেনটিভ দেয়া না হলে আগামী বোরো মৌসুমে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, এ বছর আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ৭ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে মোট ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। ওসব জমিতে এবার ১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। যদিও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৮৮ টন আর গড় ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৭৬ টন। দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। তারপরও সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করতে হয়।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায়, অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যে কোনো দুর্যোগের প্রস্তুতি হিসেবে মজুদ নিশ্চিত করতেই সরকারকে চাল আমদানি করতে হয়। সরকারের যেসব সুরক্ষা কর্মসূচি ওএমএস ও বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির জন্যও সরকারের কাছে চালের মজুদ থাকতে হয়। কিন্তু যখন ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ না হয় তখন মজুদের ওপর তার প্রভাব পড়ে। চলতি বছরের বোরো মৌসুমেও সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও তার ৫৯ ভাগই পূরণ হয়নি। যদিও চালের ১১ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। শুধুমাত্র বিগত ২০১৮ সালে সরকার শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছিল। তাছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার অন্যতম কারণ কঠিন শর্তযুক্ত থাকা। কৃষককে ধান পরিবহন করে নিয়ে এসে আবার সেটার আর্দ্রতা ঠিক আছে কিনা তা নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। ধান সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে। নইলে কখনই ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ধান-চাল সংগ্রহে কোনো ব্যর্থতা নেই। চালের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টন সংগ্রহ হয়েছে। বাকিটাও হবে। আমন উৎপাদনও অনেক ভালো হয়েছে। তিন মাস আগে চাল আমদানির জোর তৎপরতা থাকলেও এখন তেমনটা নেই। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন আসছে। দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে।