নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল প্রকল্পের জমি বরাদ্দের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে। নিয়মানুযায়ী রাজউকের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় তা পরিবর্তন করতে হলে যিনি প্রদান করবেন এবং যাকে প্রদান করবেন তাদের উভয়কে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হাজির হতে হয়। কিন্তু রাজউকের পূর্বাচল শাখার কর্মকর্তারা এক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত প্লট আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো শুনানি করেনি। এমনকি প্লট পরিবর্তনের যে ফি জমা দিতে হয় তাও জমা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে রাজউক সংশ্লিষ্ট একটি চক্র এক প্রতিষ্ঠানের প্লট আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। আর এমন অনিয়ম খতিয়ে দেখতেই মাঠে নেমেছে দুদক। রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পূর্বাচল নতুন শহরের প্রায় ৭৭ কাঠা জমি প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়া হলেও অদৃশ্য ক্ষমতা ও রাজউকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জালিয়াতি করে তা অন্য একটি পক্ষকে চূড়ান্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় রাজউকের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও এ ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে। আর ওই তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে ইতোমধ্যে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দ দেয়াসহ রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও দুদক আমলে নিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালের অক্টোবর রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল একই বছরের ২৩ নভেম্বর। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের ছাড়পত্রের জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে আবেদন করে এবং নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়। আর পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের ছাড়পত্রের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর আবেদন করে এবং নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর রাজউকের ১৩তম বোর্ড সভায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর একই বছরের ৩ অক্টোবর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে পূর্বাচল প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরের ২০৪ নম্বর সড়কের ৭৬ দশমিক ৮৩ কাঠা আয়তনের ৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দ দেয়ার জন্য রাজউকে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরদিনই নাম পরিবর্তন বিষয়ে নথিতে উপস্থাপন করা হলে রাজউক চেয়ারম্যান প্রস্তাব অনুমোদিত লিখে স্বাক্ষর করে দেন। তারপর ২০ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের পরিবর্তে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নাম পরিবর্তনসংক্রান্ত পত্র জারি করা হয়। বিষয়টি জানার পর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাজউকে আবেদন করেন। কিন্তু রাজউক বিষয়টি সমাধান না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ঘটনাটি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ জারি করেন। তারপর রাজউকের সদস্যকে (এস্টেট ও ভূমি) প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত শেষে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে গত ২০ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রতীয়মান হয়েছে পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার ম-লের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজউকের এস্টেট শাখার কয়েকজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দকৃত প্লট নিয়ম বহির্ভূত ও অবৈধভাবে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নাম দেয়া হয়েছে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড। একই সাথে কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দসহ উচ্ছেদ অভিযানের নামে ঘুষ গ্রহণ, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে ৫ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে দাখিল করা হয়েছিল। অভিযোগটি দুদকে দাখিলকৃত অভিযোগের সাথে অনুসন্ধানের জন্য কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম