নিজস্ব প্রতিবেদক:
পূর্বাচল নতুন শহরে জনবসতি বাড়াতে কঠোর হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ইতোমধ্যে রাজউক ওই আবাসন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি সেক্টরে বিদ্যুৎ, পানিসহ ভবন করার মতো সব ব্যবস্থা করলেও প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তরা ভবন করতে আগ্রহী হচ্ছে না। বরং তারা প্লট খালি ফেলে রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে সুবিধা পাওয়ার পরও বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটে ভবন না করায় বরাদ্দ বাতিলের কথা ভাবছে রাজউক। মূলত রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে এবং নাগরিক আবাসন সমস্যা দূর করতেই সরকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নতুন ওই শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাসস্থানের সংস্থান হবে। বিগত ১৯৯৫ সালে ওই প্রকল্প শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রূপগঞ্জ থানা ও কালীগঞ্জ থানা এলাকার ৬ হাজার ১৫০ একর জায়গা জুড়ে রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর গড়ে তুলছে। সেখানে ৩০টি সেক্টরের অধীনে ২৬ হাজার আবাসিক প্লট রয়েছে। কিন্তু ওসব প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তির দীর্ঘদিন পরও সেখানে বসতি গড়ে উঠেনি। বরং বেশির ভাগ প্লটই খালি পড়ে রয়েছে। ওই প্রকল্পে ২৬ হাজার ভবন ওঠার কথা থাকলেও বরাদ্দপ্রাপ্তরা এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০টির মতো নকশা অনুমোদন নিয়েছে। অথচ ২৬ হাজার ২১৩টি আবাসিক প্লটের মধ্যে ইতোমধ্যে ২২ হাজার হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মধ্যে বাড়ি তৈরির জন্য মাত্র ৩০০ প্লটে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওই প্রকল্পে ৪৭২টি প্রাতিষ্ঠানিক ও ১ হাজার ৩৩টি বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে ৩১৯ দশমিক ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৪০ কিলোমিটার সারফেস ড্রেন, ৬১টি ব্রিজ, ৪৩ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রোটেকশন, ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ ও ৫টি স্কুল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। আর প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টরে ১৪০ তলার আইকনিক টাওয়ার থাকবে। আর ১ নম্বর সেক্টরে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। তাছাড়া ১৫ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা আছে। পাশাপাশি প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে ১৪টি ব্লকে হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই পূর্বাচল নতুন শহরের বরাদ্দপ্রাপ্ত অধিকাংশ প্লটই খালি পড়ে রয়েছে। কোনো কোনো প্লটে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এলাকাটি সিটি করপোরেশনের বাইরে হওয়ায় রাজউক তাদের জনবল বাড়িয়ে সিটি করপোরেশনের আদলে ওই এলাকায় সেবা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। কারণ পূর্বাচলে পরিষেবা দেয়ার জন্য তেমন কোনো কার্যকরী লোকাল অথরিটি নেই। আর একটি নতুন শহরকে ডেভেলপ করার সক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদের নেই। এমন পরিসিথতিতে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রকল্প এলাকাটি কোনো সিটি করপোরেশনের অধীনে বা সেখানে নতুন কোনো সিটি করপোরেশন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজউক তাদের নিজস্ব মেইনটেইনেন্সে চালাবে। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় পরিষেবা দেয়ার জন্য একটি কমিটি কাজ করছে।
সূত্র আরো জানায়, পূর্বাচল নতুন শহরে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ, পানি ও সড়কের কাজ করা হয়েছে। বিগত ২০১৮ সাল থেকে পিপিপি পদ্ধতিতে পানি দেয়া হচ্ছে। এখন ১,২,৩ নম্বর সেক্টরে প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ। আরো ১০টি সেক্টরে পানি যাবে। আর এভাবেই রাজউক ২০২৪ সাল নাগাদ পুরো প্রকল্প এলাকায় পানির ব্যবস্থা করবে।
এদিকে পূর্বাচল নতুন শহরে জনবসতি বাড়ানো প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক জানান, প্রকল্পে যারে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন কারণে বাড়ি করছে না। সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের ১০ হাজার প্লট দেয়া হয়েছে। তাদের বেশির ভাগেরই আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। আবার কিছু লোক বর্তমানে সরকারি আবাসনে থাকে অথবা নিজের হয়তো কোথাও ফ্ল্যাট আছে। আর ৭ হাজার লোক আছে তারা হয়তো ব্যবসায়ীদের কাছে প্লট বিক্রি করে দিয়েছে অথবা নিজে ছোট ঘর নিয়ে আছে। তাছাড়া ৪ হাজার আছে বিদেশি। তারাও বেশির ভাগ প্লট বিক্রি করে দিয়েছে। বাকি ২-৩ হাজার প্লটের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন হয়েছে। রাজউক তাদের বাড়ি বানাতে বাধ্য করবে। কারণ রাজউক প্রকল্প এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তা করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত পূর্বাচলে বাড়ি না বানালে বাধ্য হয়ে রাজউক প্লট বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তে যাবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি