November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, March 20th, 2024, 8:41 pm

পেঁয়াজ বীজ চাষে বদলেছে ফরিদপুরের এক দম্পতির জীবন

ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় লাভলী আক্তার ও ইমতিয়াজ মোল্লা দম্পতি পেঁয়াজ বীজ চাষে সাফল্যের বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। যা স্থানীয়ভাবে ‘কালো সোনা’ হিসাবে খ্যাত।

ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার লাভলী আক্তার ও ইমতাজ মোল্লা দম্পতি গত একযুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করছেন। মাত্র দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করে ৪০ বিঘায় প্রসারিত করেছেন এই দম্পতি। যার ফলে যথেষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে তাদের নিজস্ব জমিতে বহুতল ভবনে যেমন বেড়েছে জৌলুস, তেমনি জীবনযাপনে এসেছে ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন।

দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে নিয়ে এখন তাদের ব্যয়বহুল সংসার। যা এই ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বদৌলতে তাদের কাছে ধরা দিয়েছে। প্রতিবছর তারা উপার্জনের টাকায় নিজেদের স্থাবর সম্পত্তিও বাড়াতে পারছেন। নতুন করে কিনছে জায়গা-জমি।

লাভলী আক্তার বলেন, বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। তিনিও পুরোদস্তর স্বামীকে সহায়তায় নেমে পড়েন। এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয় তাদের। এরপর আর থেমে থাকেননি তাদের সমৃদ্ধির যাত্রা।

তিনি আরও বলেন, আমি এই বীজের টাকা দিয়ে ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে বিল্ডিং দিয়েছি। প্রতিবছরই নতুন জমি কিনছি। এক সময় যা ছিল অকল্পনীয়, এখন তাই বাস্তব আমাদের কাছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার তারা বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ পেঁয়াজ বীজ পাবেন বলে আশা করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে এই বীজের আবাদ করতে এক লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। সেই হিসাবে সবমিলিয়ে তাদের এবার প্রায় কোটি টাকার মতো লাভ থাকবে বলে তারা আশা করছেন।

বীজ চাষিরা জানান, এবছর মৌমাছির অভাবে এই পেঁয়াজ বীজের গাছে পরাগায়নের মাত্রা কমে এসেছে। নিরুপায় কৃষক হাতের তালু বুলিয়ে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়নের পন্থাও বেছে নেন অনেক খেতে। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়নের মতো ভালো ফলন হয়নি। আর তাই গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার গতবারের চেয়ে উৎপাদন কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সুযোগে ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানিরও আশঙ্কা রয়েছে।

তবে চাষিরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা হলে তা সার্বিকভাবেই ক্ষতি ডেকে আনবে। কারণ, ভারত থেকে আনা পেঁয়াজ বীজ নিম্নমানের। তাতে ভালো ফলন হয় না।

পেঁয়াজ বীজ আবাদে ছোট্ট শিশু প্রতিপালনের মতোই যত্নশীল থাকতে হয়। কোন রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। খেতে বীজের আবাদ শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে আর ফলন পাওয়া যায় এপ্রিল-মে মাসের দিকে। খেত থেকে তোলার পর এক বছর এই বীজ সংরক্ষণ করতে হয়।

কারণ, পরের বছর কৃষকরা এই বীজটি সংগ্রহ করে খেতে বপন করে। কালো সোনা খ্যাত এই পেঁয়াজ বীজের চাষাবাদ করে জীবনের গল্প বদলে নিয়েছেন ফরিদপুরের দরিদ্র কৃষকেরা। তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে পেরেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কৃষকদের স্বার্থে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধার দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এমনটিই প্রত্যাশা পেঁয়াজ বীজ চাষিদের।

ফরিদপুর সদরের কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বরাবরই ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজের আবাদের উপযোগী হওয়ায় আগা গোরাই এখানে বীজের ব্যাপক আবাদ হয়। মূলত ফরিদপুরে ৩ ধরনের পেঁয়াজ আবাদ হয়। সারা দেশের মধ্যে বীজের আবাদে ফরিদপুর সব সময় এগিয়ে। দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ বীজ যায় এই জেলা থেকেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দাম ভাল পাওয়ায় এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে জেলার কৃষকরা এবার সাড়ে ৭ মেট্রিকটন বীজ উৎপাদন করবে। যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের সমস্যা নিরসনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সকল ধরণের পরামর্শ সহ প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহায়তা করে আসছে। এতে তারা দিনে দিনে উন্নতি করতে পারছে এ খাতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ৭ মেট্রিকটনেরও বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে এবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলা সদরে প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে।

গত বছর ফরিদপুর জেলায় ১ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছিল। গতবারের তুলনায় এবছর আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। ভাল লাভ পাওয়ায় এই ফসলের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া সরকারের বিশেষ তদারকি থাকায় স্থানীয় কৃষি দপ্তরও এই পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে।

—–ইউএনবি