March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, April 12th, 2023, 8:33 pm

পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথি থেকে যেসব তথ্য মিলল

অনলাইন ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন গোপন নথি ফাঁস হয়েছে এবং সেগুলো এখন ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হচ্ছে। বার্তা পাঠানোর অ্যাপ ডিসকর্ডে গোপন নথির ছবি গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেখা যাচ্ছে। সময়ের ধারাবাহিকতা ধরে এবং কয়েক ডজন সংক্ষিপ্ত সামরিক নাম দিয়ে সম্পন্ন করা এসব নথির কোনো কোনোটি আবার ‘টপ সিক্রেট’ বা ‘অতি গোপনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা রয়েছে। সেগুলোতে ইউক্রেনের যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা এবং চীন ও মিত্রদের বিষয়ে নানা তথ্য রয়েছে। পেন্টাগনের কর্মকতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই নথিগুলো আসল। বিবিসি নিউজ এবং অন্য সংবাদ সংস্থা কিছু নথি মূল্যায়ন করেছে। সেগুলো থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
ইউক্রেনে ভেতরে পশ্চিমা বাহিনী
২৩ মার্চের একটি নথিতে ইউক্রেনের ভেতরে কর্মরত অল্প সংখ্যক পশ্চিমা বিশেষ বাহিনীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। তবে তাদের কার্যকলাপ বা অবস্থান সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের রয়েছে ৫০, লাটভিয়ার ১৭, ফ্রান্সের ১৫, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ এবং নেদারল্যান্ডসের একজন। পশ্চিমা সরকারগুলো সাধারণত এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করে না। তবে এই বর্ণনাটি হয়তো মস্কো লুফে নেবে। কারণ সম্প্রতি তারা বলছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া কেবল ইউক্রেন নয়, ন্যাটোরও মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, ইউক্রেনের নতুন এক ডজন ব্রিগেড-যারা সপ্তাহখানেকের মধ্যে আক্রমণ শুরু করবে, তাদের প্রস্তুতি কখন শেষ হবে সে সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছে। তারা বিস্তারিত বর্ণনা সহকারে এই তালিকা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং কামান। একটি মানচিত্রে একটি টাইমলাইন রয়েছে, যা বসন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেজুড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিককার একটি নথিতে আসন্ন পাল্টা আক্রমণের সময় ইউক্রেনের সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত বাহিনী গোছানো এবং টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা সত্ত্বেও তারা ‘পরিমিত মাত্রায় ভূমি দখলে’ আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সমস্যাগুলোও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সতর্ক করা হয়েছে, কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্রের সংকট হতে পারে। হতাহতের সংখ্যাও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার রাশিয়ার সৈন্য নিহত বা আহত হয়েছে এবং এক লাখ ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় হতাহত হয়েছে। ইউক্রেনের কিছু কর্মকর্তা ফাঁস হওয়া নথির কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলছেন, এগুলো রাশিয়ার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার অংশ হতে পারে। তবে এখানে হতাশা এবং ক্ষোভও লক্ষ করা গেছে। প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা, মিখাইলো পোডোলিয়াক এক টুইটে বলেছেন, ‘‘আমাদের ‘ফাঁস’ হওয়া নথি সম্পর্কে কম চিন্তাভাবনা করা উচিত এবং যুদ্ধ ভালোভাবে শেষ করার জন্য আরো বেশি দূরপাল্লার অস্ত্রের প্রয়োজন।’’
রাশিয়াকে রকেট দিতে মিসরের পরিকল্পনা
ওয়াশিংটন পোস্ট ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আরেকটি নথি হাতে পেয়েছে, যেখানে তারা জানতে পেরেছে, মিসর গোপনে রাশিয়ার জন্য ৪০ হাজার রকেট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। দ্য পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি কর্মকর্তাদের উৎপাদন এবং চালান গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ‘পশ্চিমাদের সঙ্গে সমস্যা এড়ানো যায়’। একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি প্রয়োজনে তার কর্মীদের শিফটে কাজ করার নির্দেশ দেবেন। কারণ এর আগে রাশিয়া যে অনির্দিষ্ট সাহায্য করেছিল তার মূল্য দেওয়ার সর্বনিম্ন সুযোগ এটি। তবে রাশিয়া এর আগে কী ধরনের সাহায্য করেছিল তা স্পষ্ট নয়। জানুয়ারিতে, রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০২২ সালে রাশিয়া মিসরীয় গম আমদানি বাড়িয়েছে এবং এটি একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে। মিসর রাশিয়ার কাছে প্রস্তাবিত বিক্রয় সম্পন্ন করেছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। এটি ওয়াশিংটনের দেওয়া সরাসরি হুঁশিয়ারির ফল কিনা তা-ও জানা যায়নি। কিন্তু মিসর হলো মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার বৃহত্তম গ্রাহকদের মধ্যে একটি, যারা বছরে প্রায় এক বিলিয়নের মতো মার্কিন ডলার পায়। আর এ বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। মিসরীয় সংবাদ চ্যানেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিতে উল্লিখিত অভিযোগটি ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’। তিনি বলেছেন, যুদ্ধে কায়রো কারো পক্ষ নেয়নি। এদিকে ক্রেমলিন এই অভিযোগকে ‘আরেকটি গুজব’ বলে বর্ণনা করেছে।
দোটানায় দক্ষিণ কোরিয়া
বিবিসি এই গোপন নথিগুলোর একটিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে দোটানায় রয়েছে। সাংকেতিক গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রতিবেদনে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যকার স্পর্শকাতর আলাপচারিতার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং যুদ্ধরত দেশে অস্ত্র বিক্রি না করার জাতীয় নীতির মধ্যে দোটানায় রয়েছে এই দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র দেওয়া এড়াতে কামানের গোলাগুলো পোলান্ডে পাঠানোর পরামর্শ দেন একজন উপদেষ্টা। গত বছর একটি পুনঃসরবরাহ চুক্তির অংশ হিসেবে সিউল জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে, তারা যাতে কামানের এসব গোলা ইউক্রেনে না পাঠায়। রাশিয়ার বিরোধিতা করার ভয়ে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে নারাজ সিউল। এই নথি ফাঁসের ঘটনার পর সিউলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদেরা প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এমন উচ্চ পর্যায়ের কথোপকথন শুনল।
চীনা হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা
দ্য পোস্ট আরো জানতে পেরেছে, বেইজিং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের একটি পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-২৭ হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলের পরীক্ষা চালিয়েছে। নথি অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্রটি ১২ মিনিট ধরে আকাশে উড়ে দুই হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে।
দ্য পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্রটির মার্কিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেদ করার ‘উচ্চ সম্ভাবনা’ রয়েছে। তাদের বিশ্লেষণে চীনের আরেকটি যুদ্ধজাহাজ এবং মার্চ মাসে রকেট ছোঁড়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যা চীনের সক্ষমতা বাড়াবে। সূত্র : বিবিসি