April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 12th, 2021, 6:51 pm

পেরুর শাইনিং পাথের প্রতিষ্ঠাতা আবিমায়েল গুজমানের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক :

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর মাওবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী শাইনিং পাথ এর প্রতিষ্ঠাতা আবিমায়েল গুজমান কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ থাকার পর শনিবার কারাগারেই তার মৃত্যু হয় বলে পেরু সরকার জানিয়েছে। ১৯৯২ সালে পেরুর রাজধানী লিমা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিচারে সন্ত্রাসী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত গুজমানকে বাকি জীবন কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তার গ্রেপ্তারের বর্ষপূর্তির একদিন আগেই ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। পেরুর কারা প্রধান সুসানা সিলভা শনিবার আরপিপি রেডিওকে বলেন, গুজমান বেশ কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন, অগাস্টের প্রথমদিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। গত দুই দিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, শনিবার তাকে ফের হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল কিন্তু তার আগেই স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে নিজের কারাকক্ষেই তার মৃত্যু হয়। “সকালে আমাকে জানানো হয় যে জনাব সন্ত্রাসী আবিমায়েল গুজমান সাধারণ সংক্রমণে ভুগে মারা গেছেন,” পেরুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ালতের আইয়ালা এমনটি বলেছেন বলে তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স। দর্শনের সাবেক অধ্যাপক গুজমান আজীবন কমিউনিস্ট ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে তিনি চীনে গিয়েছিলেন। সেখানে চীনের নেতা মাও জেদংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবে বিস্মিত হন তিনি। এরপর শ্রেণী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পেরুতে মাওবাদী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠায় কৃতসংকল্প হন। কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে ১৯৮০ সালে সমর্থকদের একটি দলকে আয়াকুছো শহরের নিকটবর্তী আন্দিজ পর্বতমালায় নিয়ে যান। সেখানে গুজমান সেনদেরো লুমিনোসো (উজ্জল পথ) বা শাইনিং পাথ গেরিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক একনায়কত্বের কবলে থাকার পর ১৯৮০ সালের যে দিনটিতে পেরুতে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সেদিনই শাইনিং পাথের বিপ্লবী অভিযান শুরু হয়। শাইনিং পাথের গেরিলারা শটগান, ডায়নামাইট ও চাপাতি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, নির্বাচিত কর্মকর্তা ও তাদের মতাদর্শের বিরোধিতাকারী কৃষকদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। এমন তীব্র অনুপ্রেরণা ও নির্মমতা নিয়ে তারা লড়াই শুরু করে যা এর আগে লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আয়াকুছো শহর ছাড়িয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া শাইনিং পাথের দিকে হাজার হাজার গরীব কৃষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়। সাধারণ কৃষক ও কট্টরপন্থি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা এই দলটিকে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে অদম্য গেরিলা বাহিনীতে পরিণত করেন গুজমান। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রধানত দারিদ্র কবলিত অঞ্চলগুলোতে শাইনিং পাথের বিদ্রোহের মাধ্যমে পেরুতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় প্রায় ৬৯ হাজার লোক নিহত হয়। শাইনিং পাথের সাহসী ও নিখুঁত পরিকল্পিত আক্রমণ, এর চর ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং গুজমানের গ্রেপ্তার এড়ানোর অস্বাভাবিক ক্ষমতার কারণে তিনি একই সময় সব জায়গায় আছেন বলে মনে হওয়া তাকে প্রায় কিংবদন্তির খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৮১ সালে রাজধানী লিমার বাসিন্দারা প্রথম শাইনিং পাথের প্রত্যক্ষ পরিচয় পায়। ওই সময় দলটির গেরিলারা বহু কুকুর মেরে লিমার ল্যামপোস্টে ঝুলিয়ে দেয় এবং সেগুলোর গায়ে ‘পুঁজিবাদের কুকুর’ শ্লোগান সেটে দেয়। ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে গেরিলা দলটি পেরু রাষ্ট্রের জন্য এতটাই হুমকি হয়ে উঠেছিল যে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ লোক জরুরি অবস্থা বা সামরিক আইনের অধীনে বাস করতে একরকম বাধ্য হয়। বছরের পর বছর লড়াই চলার সময় গুজমানকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ায়। কখনো তার মৃত্যু হয়েছে বা তিনি গুরুতর অসুস্থ এমন কথা আবার কখনো কখনো তিনি ইউরোপে আরামদায়ক জীবন কাটাচ্ছেন বলে গুজব ছড়ায়। তার অনুসারীরা তাকে কার্ল মার্ক্স, ভ. ই. লেনিন ও মাওয়ের পর মার্কবাদের চতুর্থ তরবারি বলে ডাকত এবং বিপ্লবী মন্ত্রে, গানে, পোস্টারে ও সাহিত্যে তাকে শ্রদ্ধা, সম্মানে ভরিয়ে তুলত। তার লেখা অল্প কিছু বই শাইনিং পাথ অনুসারীদের কাছে মন্ত্রের মতো হয়ে উঠেছিল। তবে তার এসব বই মার্ক্সবাদী প-িতদের তেমন নজর কাড়েনি। আশির দশকের শেষ দিকে গুজমানের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান শুরু হলেও শাইনিং পাথের হামলার তীব্রতা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে পেরুর ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি বিদ্রোহ দমনের কথা বলে প্রায় একনায়কসুলভ ক্ষমতা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর ১৯৯২ সালে লিমার একটি মধ্যবিত্ত আবাসিক এলাকার সন্দেভাজন ‘নিরাপদ আস্তানা’ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপর বিচারে তার আজীবন কারাবাসের দ- হয়। ১৯৯২ সালে লিমায় এক গাড়ি বোমা হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার এক মামলায় ২০১৮ সালে গুজমানকে দ্বিতীয়বারের মতো আজীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছিল।