April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 19th, 2021, 8:01 pm

প্রতারণার ফাঁদে ৫ দিনমজুর, হাইকোর্টের জামিন চেম্বারে বহাল

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ দিনমজুরকে হাইকোর্টের দেওয়া এক বছরের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। পরে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ দিনমজুরের এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন হাইকোর্ট। গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত। গত ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির পাঁচ দিনমজুরের পক্ষে জামিন আবেদন করেন। ওই পাঁচ দিনমজুর হলেন- কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবাঁস গ্রামের বিধবা ফুলমনি রানী, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মণ। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে চারজন কারাগারে আছেন। গত ১৫ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘করোনা প্রণোদনার নামে প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে ৪ দিনমজুর কারাগারে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে গত ১ জুলাই দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক। সরকারি ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার এ মামলায় গাজীপুর থানা পুলিশ ২ জুলাই চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। অপরজন দিনমজুর পলাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত পাঁচ দিনমজুরের পরিবারের দাবি, করোনা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তারা জড়িত নন। দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে তাদের ফাঁসানো হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার চারজন ও পলাকত একজনসহ শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামি করা হয়। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর পাড়ে বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবাঁশ গ্রামের বাসিন্দা ওই পাঁচ পরিবার বলছে, সরকারি টাকা আত্মসাৎকারী একটি চক্রের প্রতারণার কারণে তাদের ভাগ্যে এমন বিপদ নেমে এসেছে। বসতভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো সম্পদ নেই। বাড়ি ছাড়া দিনমজুর সুবল চন্দ্র মোহন্তের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তারা গাজীপুর ও শ্রীপুরে কোনোদিন যাননি। তানভীর ইসলাম স্বপনই তাদের নিয়ে গেছেন। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তারা প্রণোদনার টাকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যেই পুলিশ এসে চারজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন। সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজম বলেন, ব্যাংক হিসাব চালুর কিছুদিন পর এই পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এর মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রবাসের ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানীর হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে। তিনি জানান, কয়েক দিন পর অপরিচিত তিন-চারজন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে তার সন্দেহ হয় এবং শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করা হয়। কিন্তু অপরিচিত লোকগুলোকে আটক করার আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায়। হিসাব নম্বরধারী দিনমজুররা এসবের কোনো কিছুই জানতেন না বলে জানান শরিফুল আজম। ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব কুমার রায় বলেন, এটি শ্রীপুর থানার ঘটনা। শ্রীপুর থানা পুলিশই ব্যবস্থা নেবে। তাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হলে তারা বিস্তারিত জানাবেন।