অনলাইন ডেস্ক :
জ্বালানি সংকটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রাশিয়া মহামূল্যবান গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে বলে দাবি করছে পশ্চিমারা। অযথা গ্যাস পুড়িয়ে ফেলায় পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ফিনল্যান্ড-রাশিয়া সীমান্তে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লতে দেখার কথা জানান ফিনিশ নাগরিকরা। সে ছবিও এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে সেটি দুর্ঘটনা মনে করা হলেও অব্যাহতভাবে আগুন জ¦লতে থাকায় কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান তারা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, মূলত ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পোর্তোভায়ার এলএনজি স্থাপনায় প্রতিদিন ৪০ লাখ ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাস পোড়াচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের নতুন এই স্থাপনাটিতে যে পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি পোড়ানো হচ্ছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় এক কোটি ডলার। জার্মানির দাবি, এই গ্যাস আগে নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে রফতানি করা হতো।জ্বালানি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রাইস্টাড এনার্জি রুশ গ্যাস স্থাপনায় আগুনের ঘটনাকে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছে। বিপুল পরিমাণ গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার কারণে প্রতিদিন ৯ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশের সঙ্গে মিশে বায়ুদূষণ করছে। জানা যায়, গ্যাস প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ও অন্যন্য প্রযুক্তিগত কারণে গ্যাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ওই প্ল্যান্টে গ্যাস পোড়ানোর কারণে যে বড় আগুনের কু-লী জ¦লছে সেটি স্বাভাবিক নয়। রাইস্টাড বলছে, পোর্তোভায়া এলএনজির নতুন স্থাপনাটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার কথা। নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষার অংশ হিসেবে প্রায়ই সেখানে আগুন জ¦লতে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও আগুনের ব্যাপ্তি ও স্থায়িত্বের কারণে সংস্থাটির সন্দেহ, পরীক্ষা নয় বরং ইচ্ছে করেই গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া।রাইস্টাডের জ্বালানি ও গ্যাসবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জংকিয়াং লুও-র মতে, রাশিয়ার ইতিহাসে এত সময় ধরে কখনোই গ্যাস পোড়ানো হয়নি। বিশেষ করে ওই অঞ্চলে যে পরিমাণ তাপমাত্রা শনাক্ত হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফিনল্যান্ডের এলইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এশা ভাক্কিলাইনেন বলছেন, এত সময় ধরে গ্যাসের আগুন জ¦লার অর্থ হতে পারে, তাদের কাছে হয়তো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। রাশিয়ার ওপর যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার ফলে তেলও প্রক্রিয়াজাত করতে প্রয়োজনীয় উঁচু মানের ভাল্ব তারা তৈরি করতে পারছে না। হয়তো কিছু ভাল্ব ভেঙে গেছে এবং তারা সেখানে নতুন ভাল্ব বসাতে পারছে না বলে মনে করেন এশা ভাক্কিলাইনেন। গ্যাসের আগুন নিয়ে কাজ করা ক্যাপটেরিও নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মার্ক ডেভিস বলেন, যে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে, তা কোনো দুর্ঘটনার নয়। প্ল্যান্ট চালু রাখার জন্য এটি ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত। আবার অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, নিজেদের গ্যাস পুড়িয়ে ইউরোপ ও পশ্চিমাদের বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মার্ক ডেভিসের দাবি, গ্যাসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। অর্থাৎ, রাশিয়া বলতে চাইছে তাদের কাছে গ্যাস আছে এবং তারা ইউরোপের কারণেই পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। কেননা, ইউরোপীয় নেতারা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা টালবাহানায় এই গ্যাস সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে।যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপের দেশগুলোকে ডলার অথবা ইউরোর বদলে রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে শর্ত দিয়েছে। যদিও ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি কমাতে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে ইউরোপের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে।
অযথা গ্যাস পুড়িয়ে ফেলায় পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে উত্তরমেরুর বরফ গলার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু