নিজস্ব প্রতিবেদক:
রমজানের প্রথম দিনই রাজধানীতে গ্যাসের হাহাকার শুরু হয়েছে। রোববার (৩রা এপ্রিল) রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় দুপুরের পর থেকেই ছিল না গ্যাস। কোথাও থাকলেও তা এত কম ছিল যে পানিও গরম করা যাচ্ছিল না। দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি বিবিয়ানা। সেই ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ বন্ধ। যার প্রভাব পড়েছে ঢাকায়।
সংকট কাটতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। রোববার (৩রা এপ্রিল) গ্যাসের সংকট দেখা গেছে ঢাকার মোহম্মদপুর, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, শংকর, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, রামপুরা, ওয়ারী, মগবাজার, বনশ্রী, গোপীবাগ, মিরপুর, ইস্কাটন, মানিকদিসহ আরও কিছু এলাকায়। পশ্চিম ধানমন্ডির বাসিন্দা আমেনা মুক্তা জানান, ‘দুপুর পর্যন্ত মোটামুটি গ্যাস ছিল। দুপুরের পর একেবারেই নেই। ইফতারের কিছুই রান্না করতে পারিনি।’ ইস্কাটনের বাসিন্দা নওরীন আক্তার জানান, ‘সকাল থেকেই গ্যাসের চাপ কম। দুপুরের পর আরও কমে গেছে।’ একই অভিযোগ মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা বেগম ও গোপীবাগের দীপংকর বরের। মানিকদি থেকে দীপা মল্লিক জানান, ‘মোটেও গ্যাস নেই। চুলাই জ¦লছে না।’ উত্তরা-৪ থেকে নাফিসা জানান, ‘কাল রাত থেকেই গ্যাস নেই। এখনও আসেনি। ইফতার বানাতে না পেরে দোকান থেকে কিনে এনেছি।’ একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মগবাজার, রায়েরবাজার, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, রামপুর, বনশ্রী ও মিরপুরের বাসিন্দারা।
রোববার (৩রা এপ্রিল) দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ফেসবুক পেইজের একটি পোস্টে জানা গেছে, বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিজনিত কারণে কিছুকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। ফলে কোনও কোনও এলাকায় সাময়িকভাবে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এই অসুবিধার জন্য মন্ত্রণালয় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছে। ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা স্ত্রূ জানায়, বিবিয়ানার ছয়টি কূপ থেকে গত রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে বন্ধ করে দিতে হয় উৎপাদন। এতে রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। আবাসিক এলাকায় সাধারণত প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানবলেন, ‘হঠাৎ বিবিয়ানায় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কিছুই করার ছিল না। আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিকাল নাগাদ একটি কূপ মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আজকের মধ্যে আরও তিনটি কূপ উৎপাদনে আসবে বলে আশা করছি। এরপর আরও একটি কূপ চালুর কথা। তবে একটি কূপ মেরামত করতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে শেভরন। ফলে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো ঘাটতি থেকে যাবে। ৮ এপ্রিল আমাদের একটি এলএনজির কার্গো দেশে পৌঁছাবে। এরপর ১০ এপ্রিল নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি। একই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহেও ঘাটতির শঙ্কা তৈরি হলো। কারণ, দেশের প্রায় অর্ধেক কেন্দ্র এখনও গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে নাজমুল আহসান বলেন, ‘চেষ্টা করছি বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে। এখন তো গরম। চাহিদা এমন সময় বেশি থাকে। ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় যাতে বিদ্যুৎ সংকট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক