নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া যশোরের সেই শারীরিক প্রতিবন্ধী লিতুন জিরা। পাশাপাশি তার পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা অর্থসহায়তা দিবেন তিনি। আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে লিতুন জিরাকে এ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এর আগে চলতি মাসের ৩ মার্চ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করে চিঠি লিখে লিতুন জিরা। সেই চিঠি পেয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিতুনের খোঁজ নেন। ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি ও ৫ লাখ টাকার অর্থসহায়তা পাওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি এসেছে লিতুন জিরার বাড়িতে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বাবা হাবিবুর রহমান। লিতুন জিরা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট লিতুন। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান ওই উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। তিনি ১৮ বছর ধরে কলেজটিতে শিক্ষকতা করছেন। লিতুনের মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিতুন জিরাকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন জানতে পেরে খুব খুশি লিতুন জিরা। সে জানায়, খবরটি প্রথমে আমার বাবাই প্রথম দিয়েছিল। শুধু আর্থিক সহায়তাই না, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি দেখাও করতে পারবো আমি। আমার যে কত খুশি লাগছে। আমার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণে আমি ও আমার পরিবার সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সেই সংগ্রামে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে পাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের প্রতি খুবই আন্তরিক এমন একটি প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি আমরা। লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, লিতুন খুবই মেধাবী। ছোট বেলা থেকেই উদ্যমী। কিছু করার প্রতি তার মনের মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। সেই আগ্রহ আর পরিশ্রম সংগ্রামীর মধ্য দিয়ে সে আজ অনেকপথ এগিয়েছে। ওর হাতের লেখা সুন্দর। ছবিও ভালো আঁকতে পারে। কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। গান গাইতে পারে। পড়াশোনার আর পাঁচ-দশটি মেয়ের মতো ভালো। পিএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি বৃত্তি লাভ করে। সেই ধারাবাহিকতা আশা করি সে ধরে রাখবে। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। ও যত দূর পড়তে চায়, আমি তত দূর পড়াবো। হাবিবুর রহমান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিবেন বলে একটি চিঠি এসেছে বাড়িতে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিএস আমার সঙ্গে কথা বলেছে। রোববার সেই চেক লিতুনের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে দিবেন। লিতুনের পাশে দাঁড়ানোই শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জন্ম থেকেই লিতুন জিরার দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের ওপর থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা মেয়েটির। লেখার জন্য ডান হাতের বাহুর আগা দিয়ে কলম চেপে ধরে চোয়ালে। এভাবে লিখেই কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাথমিকের গ-ি পেরিয়ে পড়াশোনা করছে মাধ্যমিকে। এবার সে উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। লিতুন জিরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায় পুরস্কার লাভ করেছে। এ ছাড়া আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় নিজের পারদর্শিতা দেখানোর পাশাপাশি খুলনা বেতারেও নিয়মিত গান ও কবিতা আবৃত্তির করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি