নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে দেশে সোনা চোরাচালান হচ্ছে। এর সাথে দেশী-বিদেশী চক্র জড়িত। তারা নানা কৌশলে প্রবাসীদের মাধ্যমে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকলেও থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত আড়াই ডজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশে সোনার চালান আসে। তার মধ্যে ৭টি বিদেশী সিন্ডিকেট আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরেই রয়েছে ১১টি সিন্ডিকেট। ওই চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বদলে দেশে সোনা আনছে। সোনা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে দেশের হাফ ডজন মানি এক্সচেঞ্জ জড়িত থাকারও তথ্য মিলেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বর্ণশিল্প খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ কেজি স্বর্ণ আটক করা সম্ভব হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিশাল অংশ। তার অধিকাংশই স্বর্ণ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে ওই সিন্ডিকেট কয়েকটি ভাগে কাজ করে। চক্রের হয়ে দেশে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। আবার সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে বিদেশেই দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করে। বর্তমানে দুবাই থেকে আসা যাত্রীরা সোনা চোরাচালান চক্রের প্রধান টার্গেট। এ কাজে উৎসাহিত করতে নানা প্রলোভন দেয়া হয়। কখনো বিমান টিকিট, কখনো কমিশন, আবার কখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বিদেশে অভিবাসী কর্মীরা রেমিটেন্স পাঠানোর সময় সোনা চোরাচালান চক্রের লোকজন তাদের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণ পাঠায়। ওই স্বর্ণ বিক্রির পর প্রবাসী কর্মীদের টাকা পরিশোধ করা হয়। ফলে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। বিদেশী ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তারা কয়েকজন বাংলাদেশী ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিলারদের অর্ডার অনুযায়ী সোনার বার প্রস্তুত রাখে। আর ডিলাররা বাংলাদেশের সোনার দোকানগুলোতে তা সরবরাহ করে। তারপর তারা নিজেদের ব্রোকারকে দিয়ে বাহক খোঁজে। বাহকদের সঙ্গে দর কষাকষি করে বাংলাদেশে সোনা পাঠায়। বাহকদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক। তাদের কাছেই প্রতিদিন শত শত স্বর্ণের বার তুলে দেয়া হয়। আর দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। প্রবাসীরা সামান্য টাকা কমিশনের জন্য সোনা বহন করে।
সূত্র আরো জানায়, সোনা চোরাচালানের সাথে দেশের কতিপয় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও জড়িত। সোনা চোরাচালানে জড়িতরা খুব শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এর সঙ্গে প্রভাবশালীরাও জড়িত। ফলে হোতাদের চেয়ে সোনা বহনকারীরাই আটক হচ্ছে বেশি। বাহকরা স্বর্ণ কার কাছ থেকে এসেছে, কোথায় যাবে বা কার কাছে যাবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানে না। ফলে হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে ৩০টি সিন্ডিকেট স্বর্ণ পাচার করে থাকে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম