অনলাইন ডেস্ক :
কিংবদন্তি সব্যসাচী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে নির্মিত হলো কোনও পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। পেলো কাটাকুটি ছাড়া ছাড়পত্রও। ছবিটির নাম ‘প্রিয় সত্যজিৎ’। প্রশংসিত নির্মাতা প্রসূন রহমানের বিশেষ এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির লক্ষ্য ছিলো ২ মে, সত্যজিতের জন্মদিনে। সেই লক্ষ্যেই নির্মাতার সকল প্রস্তুতি। গত বুধবার পেয়েছেন সেন্সর বোর্ড থেকে প্রশংসাসহ ছাড়পত্র। কিন্তু মুক্তির তারিখটি পেছাতে বাধ্য হলেন নির্মাতা। বললেন, ‘প্রস্তুতি থাকলেও তারিখটি আমাদের অনুকূলে নেই। কারণ একই সময়ে ঈদ উৎসব। অনেক ছবি ঈদকে কেন্দ্র করে মুক্তি পাচ্ছে। এসব বিবেচনা করে মুক্তির তারিখ পেছানো হলো। আশা করছি ঈদের পরপর নিকটবর্তী যে কোনও সময় চলচ্চিত্রটি আলোর মুখ দেখবে।’ ঈদের ডামাডোলে ‘প্রিয় সত্যজিৎ’র মুক্তি পেছালেও থেমে নেই ছবিটির প্রচারণা। ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণ দিবসে লক্ষ্য করে শুক্রবার প্রসূন রহমান প্রকাশ করছি ছবিটির জোড়া পোস্টার। যেটি দেখে নেটাগরিকরা ভাসছেন মুগ্ধতায়। কারণ, পোস্টারে স্থান পাওয়া অভিনেতা আহমেদ রুবেলের মাঝে ভক্তরা খুঁজে পাচ্ছেন প্রিয় সত্যজিৎ রায়কে। প্রসূন রহমান বলেন, ‘সব প্রস্তুতি নিয়েও জন্মদিনে যেহেতু ছবিটি মুক্তি দিতে পারছি না, সেহেতু তাঁর (সত্যজিৎ রায়) মৃত্যু দিবসকে লক্ষ্য করে পোস্টার দুটো প্রকাশ করলাম। পোস্টার দুটি ডিজাইন করেছেন আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী-সহযোদ্ধা কামরুল হাসান সুজন। তিনিসহ ছবিটির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা।’ উপমহাদেশের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা গড়ে ওঠার পেছনে সত্যজিৎ রায়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে যারা জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়েছেন তাদের প্রায় বেশিরভাগেরই আদর্শ নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। এমন ভাবাবেগ নিয়েই বাংলাদেশ থেকে ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ নামে এই ট্রিবিউট ফিল্ম নির্মিত হলো। কিশোরগঞ্জের মসূয়ায় সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িসহ আরও দুটি জায়গায় এবং পুরনো ঢাকার একটি বাড়িতে কাজ হয়েছে ছবিটির। নির্মাতা জানিয়েছেন, ‘এটি হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ থেকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।’ গল্পসূত্র হিসেবে নির্মাতার বর্ণনা এমনÑএর কাহিনি ৩ সময়ের ৩ জন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে। প্রথমজন সত্যজিৎ রায় নিজে। যিনি উপস্থিত না থেকেও সেখানে বিরাজমান। আর অন্য দুজন পরবর্তী দুই প্রজন্মের। সত্যজিৎ রায় ও তার সৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে তার দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ি পরিভ্রমণের সূত্রে নবীন নির্মাতা অপরাজিতা হক আবিষ্কার করেন সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘অপু ট্রিলজি’র সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদের অন্য এক গল্প। যেখানটায় আলো পড়ে না কখনও। প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল আর নবীন নির্মাতা অপরাজিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌটুসী বিশ্বাস। আরও কয়েকটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন পংকজ মজুমদার, সাইদ বাবু, সঙ্গীতা চৌধুরী, লাবণ্য চৌধুরী, এহসানুল হক, নুসরাত জাহান নদী ও আবীর। অপরাজিতার সহযোগী ফিল্ম-ক্রু’র চরিত্রে অভিনয় করছেন সত্যিকারের কলাকুশলীদের কয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, চিত্রগ্রাহক নাজমুল হাসান, রাসিফ চৌধুরী, মুখর, আবিহা, শামিম ও জাফর প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ হচ্ছে প্রসূন রহমানের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ইমেশন ক্রিয়েটরের ব্যানারে। প্রসূন রহমান এর আগে নির্মাণ করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’ (২০১৫), ‘জন্মভূমি’ (২০১৮), ‘নিগ্রহকাল’ (২০১৯) এবং সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা ড্রিম’ (২০২১)। নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র- ‘রাইস অ্যান্ড প্রে’, ‘ফেরা’, ‘নদী ও নির্মাতা’, ‘ব্যালাড অফ রোহিঙ্গা পিপল’ (৭ পর্ব) ‘এই পুরাতন আখরগুলি’ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র- ‘মার্চ টু ডিসেম্বর’।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ