April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, May 25th, 2023, 9:33 pm

প্রশাসনের উচ্চ ও মধ্য পর্যায়ে বেশি কর্মকর্তা থাকলেও নিম্নস্তরে সঙ্কট

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারি প্রশাসনের উচ্চ ও মধ্য পর্যায়ে বেশি কর্মকর্তা থাকলেও নিম্নস্তরে সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিব পদ ৬৯টি থাকলেও কর্মরত আছেন ৮০ কর্মকর্তা। অতিরিক্ত সচিবের ১৪০টি পদে কর্মরত আছেন ৩১৬ কর্মকর্তা। উচ্চপর্যায়ের ওই পদে ১৭৬ কর্মকর্তা বেশি। যুগ্ম-সচিবের ৩৩২টি পদে আছেন ৮৪৭ কর্মকর্তা। সেখানে ৫১৫ কর্মকর্তা বেশি। আর ৪৩০টি সুপারনিউমেরারি পদসহ উপ-সচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি থাকলেও কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭০২ জন। সেখানেও ২৭৪ কর্মকর্তা বেশি। সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ১ হাজার ৮৭৫ কর্মরত থাকলেও অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫। অর্থাৎ পদসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কর্মরত। আর সহকারী সচিব পদে ১ হাজার ৪৩৮ কর্মরত থালেও পদসংখ্যা ১ হাজার ৩৯৩। অর্থাৎ ওই পদেও ৪৫ জন বেশি কর্মকর্তা রয়েছে। অথচ নিচের দিকে কর্মকর্তার স্বল্পতার কারণে মাঠ প্রশাসনে কাজের স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। দেশে এসিল্যান্ডের ব্যাপক স্বল্পতা। সকল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও উন্নয়ন কর্মকা- ঠিকমতো চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে প্রশাসনে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত প্রতি স্তরের পদের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা আছেন। উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত তিন স্তরে অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪৭০টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ২ হাজার ৮৬৫ কর্মকর্তা। অর্থাৎ অতিরিক্ত কর্মকর্তা ১ হাজার ৩৯৫ জন, যা অনুমোদিত পদের প্রায় দ্বিগুণ। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতি পাওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তাকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো যুগ্ম-সচিবকে দিয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের কাজও করানো হচ্ছে। মূলত প্রশাসনের অর্গানোগ্রাম (সাংগঠনিক বা জনবল-কাঠামো) এখন উপেক্ষিত। বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী পদায়ন ও পদোন্নতি কোনোটিই হচ্ছে না। ফলে প্রশাসনের উচ্চ ও মধ্য পর্যায়ে নির্ধারিত পদের দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি কর্মকর্তা থাকলেও নিম্নস্তরে কর্মকর্তার সংকট।

মূলত অতীতে অপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ প্রদান, পদ ছাড়া পদোন্নতি দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রশাসন ৪০ বছর আগের তৈরি জনবল কাঠামোতেই চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের জনসংখ্যা ও প্রশাসনের কর্মপরিধি ব্যাপকভাবে বাড়লেও জনবল কাঠামো হালনাগাদ করা হয়নি। প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন পদ সৃজন করে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিচের দুই স্তরে (সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব) অনুমোদিত পদের চেয়ে কর্মকর্তা অনেক কম থাকায় জনপ্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ার পাশাপাশি কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। ওই দুই স্তরের অনুমোদিত ৪ হাজার ৩৬৮টি পদে কর্মরত আছেন ৩ হাজার ৩১৩ জন। ওই দুটি স্তরে শূন্য পদের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ জন। অথচ বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ জন অতিরিক্ত সচিব থাকার কথা। সেখানে আছেন ৮ জন। ৫টি যুগ্ম সচিব পদে আছেন ২৫ জন। ২৩ জন উপসচিবের জায়গায় কর্মরত ৪৭ জন। অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদের চার গুণ, যুগ্ম সচিব পদে পাঁচ গুণ, উপসচিব পদে দ্বিগুণ কর্মকর্তা আছেন। অন্যদিকে সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিবের ৪৭টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ২৯ কর্মকর্তা।

অর্থাৎ নিচের দিকে অনুমোদিত পদের অর্ধেক কর্মকর্তা কর্মরত। প্রায় অভিন্ন চিত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৩ জন অতিরিক্ত সচিবের জায়গায় আছেন ৬ জন, ৫ যুগ্ম সচিবের স্থলে কাজ করছেন ২৫ জন। আর সহকারী সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিবের ৫৪টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১০ জন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগেও অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত ২টি পদে কাজ করছেন ৮ কর্মকর্তা। ৬ যুগ্ম সচিবের জায়গায় আছেন ১৪ জন। একইভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ৪ যুগ্ম সচিব ও ১৩ উপসচিবের পদে কাজ করছেন যথাক্রমে ১৪ ও ২২ জন কর্মকর্তা। অন্যদিকে সহকারী সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিবের ২৯টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১০ জন।

সূত্র আরো জানায়, অতীতে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কারণে প্রশাসন বিকৃত আকার ধারণ করে। সে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া শুরু হয়। ওই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত এনাম কমিশনের পর প্রশাসনিক সংস্কারের কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে ৪০ বছর আগের জনবল দিয়ে বর্তমান প্রশাসন বা মন্ত্রণালয় চালানো সম্ভব নয় না। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, চার দশক আগে ১৯৮৩ সালে এনাম কমিশন গঠন হয়েছিল। ওই কমিশনের তৈরি জনবল কাঠামো অনুযায়ী চলছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর। প্রয়োজন অনুযায়ী কিছুকিছু দপ্তরে নতুন পদ সৃজনের মাধ্যমে জনবল কাঠামো হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। চেষ্টা করা হচ্ছে প্রশাসনকে পিরামিড আকৃতিতে ফেরত আনার। সেজন্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি কম দেয়া হচ্ছে।