নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট ১৯টি প্রাইভেট আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) রপ্তানি কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। ওসব আইসিডিগুলোতে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের)। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ১৪ হাজার কনটেইনার রয়েছে। ফলে বাড়তি কনটেইনারের চাপ সামাল দিতে আইসিডিগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তার মধ্যে অধিকাংশই কনটেইনারে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের চালান। আর তৈরি পোশাকের অনেক চালান একসঙ্গে আটকে যাওয়ায় রপ্তানিকারকরাও বিপাকে পড়েছে। কারণ যথাসময়ে পণ্য পাঠাতে না পারায় অনেকেরই রপ্তানি আদেশ বাতিলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মূলত জাহাজ স্বল্পতা এবং কনটেইনার নিতে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের বিলম্বের কারণে রপ্তানি কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রাইভেট আইসিডিগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাপা), এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। রফতানিকারক এবং বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানি পণ্যের শতভাগ এবং আমদানি পণ্যের প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাইভেট আইসিডিগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে এনে রাখে। তারপর তা কনটেইনার বোঝাই করে (স্টাফিং) কাস্টম কর্তৃপক্ষের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে লরিযোগে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয়। আগে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতো। ফলে প্রায়ই বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার জট দেখা দিত। বন্দরকে ওই জট থেকে মুক্ত করতেই বেসরকারি খাতে আইসিডি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। আইসিডিগুলো চালু হওয়ার পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সময় কনটেইনারের জট দেখা দেয়। তবে হরতাল, ধর্মঘটের মতো পরিস্থিতি না হলে আইসিডিগুলো বরাবরই জটমুক্ত ছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রাইভেট আইসিডিগুলোকেও কনটেইনারের বাড়তি চাপ বহন করতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার পর্যন্ত রপ্তানি কনটেইনার রাখা যায়। তার বেশি হলেই বেকায়দায় পড়তে হয়। বর্তমানে প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে ১৪ হাজার রপ্তানি কনটেইনার রয়েছে। আর দিন দিন ওই সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে আটকে আছে। সময়মতো শিপমেন্ট হচ্ছে না। বিদেশি ক্রেতারা একবার যথাসময়ে পণ্য বুঝে না পেলে পরবর্তীতে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাতে রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এবার রপ্তানি যে বিলম্বিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন জানান, সিঙ্গাপুর ও কলম্বো ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার জাহাজগুলো কনটেইনার নিয়ে ওই দুটি বন্দরে রাখে। সেখান থেকে মাদার ভেসেলে করে বিশ্বের বিভিন্ন দূর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই দুটি বন্দরে মাদার ভেসেলের আগমন কমে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে গেলে প্রথমত সেখানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত মাদার সময় মতো ভেসেলও মিলছে না। একই সঙ্গে খালি কনটেইনারেরও একটি সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু রপ্তানি হয় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে করে। আগে সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন বন্দর থেকে কনটেইনার এনে রপ্তানি চলতো। এখন বিশ্বব্যাপী কনটেইনার মুভমেন্ট কমে গেছে। অনেক কনটেইনার বিদেশি বন্দরগুলোতে আটকে আছে। সবকিছু মিলিয়ে পণ্য রপ্তানিতে একটা দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, বন্দরে জাহাজ কম আসছে। যেসব আসছে তার বেশির ভাগই ছোট আকারের জাহাজ। ডিপোতে কনটেইনারে পণ্য স্টাফিং করার পরও দেখা যাচ্ছে শিপিং লাইনগুলো কোন কনটেইনার কখন, কোন জাহাজে উঠবে তার সঠিক তালিকা দিতে পারছে না। তাছাড়া ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা পণ্য স্টাফিংয়ে বিলম্ব করছে। তাতে কাভার্ড ভ্যান বা লরিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার জায়গার অভাবে নতুন করে লরিতে কনটেইনার তোলা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে পণ্য আনস্টাফিং করার জন্য বিভিন্ন শিপিং লাইনের বিশেষায়িত কনটেইনারও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আগে যেখানে ২-৩ দিনে রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো, সেখানে এখন ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক