প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছরই বিপর্যয় ঘটছে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি চাষে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত খরা আর ভাইরাসে উজাড় হচ্ছে চিংড়ি ঘের। এতে করে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে বাগেরহাটে চাষিরা। এ অবস্থায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের পরামর্শ দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ
ক্লাস্টার হলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত খামার সমষ্টি যা সাধারণত একই অঞ্চল ও পরিবেশে খুব কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত হয়। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে খামারগুলোর মধ্যে বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। যেমন: একই ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ বা অবকাঠামোর ব্যবহার, (যেমন- পানির উৎস, বর্জ্য নির্গমন ব্যবস্থা ইত্যাদি) একই বা কাছাকাছি চিংড়ি চাষ পদ্ধতির অনুসরণ, একই প্রজাতির মাছ বা চিংড়ি চাষ বা মিশ্রচাষ করা, উদ্যোগী সংশ্লিষ্ট দল হতে হবে।
চিংড়ি ক্লাস্টার এমন একটি সংগঠন যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার চিংড়ি চাষিদের নিয়ে গঠিত হয় এবং সদস্যরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমন্বিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জেলায় আট হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা সাত হাজার। জেলায় ৬৯ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৬৫৭টি মৎস্য ঘের রয়েছে। জেলায় মোট মৎস্য চাষির সংখ্যা ৬২ হাজার।
বাগেরহাট সদরের মাঝিডাঙ্গা গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, পানিতে অধিকাংশ ঘের মিশে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চিত্র প্রায় একই। তাই ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিরা সরকারের কাছে প্রণোদনা আর সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানিয়েছে।
গত ১০ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পাঁচদিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাত এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা উপজেলায় আট হাজার মৎস্য ঘের ডুবে গেছে। জেলা মৎস্য বিভাগের হিসেবে বাগেরহাটে মৎস্য সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা।
তবে বাগেরহাটের চাষিদের তথ্য মতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা গ্রামের মীর হারুন অর-রশিদ জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি চিংড়ি চাষ করে আসছে। তার মোট সাত বিঘা জমিতে মৎস্য ঘের রয়েছে। বছরের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে তার ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। তার আগে ভাইরাসে অনেক চিংড়ি মারা গেছে। প্রতিবছরই প্রাকৃতি দুর্যোগে তার ঘের ডুবে অথবা পানি সংকটে তার ঘের ক্ষতিগস্ত হচ্ছে। একের পর এক লোকসানে এখন তিনি চিংড়ি চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তিনি চিংড়ি চাষের বিকল্প হিসেবে গরুর খামার তৈরি করেছেন।
চিংড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন এই চাষি।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মহিতুল ইসলাম সুমন জানান, একের পর এক বিপর্যয়ে চিংড়ি চাষিরা এখন সর্বশান্ত। প্রকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার চিংড়ি ঘের ডুবে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে যায়। সম্প্রতি পানিতে জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ভেসে গেছে বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় প্রাকৃতি বিপর্যয় থেকে চিংড়ি শিল্পকে রক্ষা করতে চিংড়ি চাষিদের বীমার আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, বারবার প্রাকৃতি দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষে আগ্রহ হারিয়েছে চাষিরা। এ কারণে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন থেকে চাষিদের ঘেরের গভীরতা বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে চিংড়ির পোনা একই জায়গা থেকে ক্রয় করতে হবে। প্রথমে পকেট ঘেরের রেখে চিংড়ি পোনা পরিচর্যা করতে হবে, নিয়মিত খাবার দিতে হবে। এই নিয়ম মেনে চললে চাষিরা লাভবান হবেন।’
এছাড়া ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া গেলে চিড়িং চাষে আগ্রহ ফিরে আসবে। চাষিদের চেষ্টা আর সরকারের প্রকল্পের কারণে চিংড়ি চাষে সুদিন ফিরে আসবে বলে আশা করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি