November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 16th, 2023, 9:47 pm

প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি গ্যাস বিপণন বিধিমালা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অবৈধ গ্যাসের অপব্যবহার রোধ, সুষম বণ্টন নিশ্চিত, গ্যাসের লোড সমন্বয় এবং সর্বোপরি রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরিকল্পনায় গ্যাস বিপণন বিধিমালা-২০১৯ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। জ¦ালানি বিভাগের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর গ্যাস বিপণন বিধিমালার খসড়া প্রকাশ হয়। মতামত নিয়ে এ ধরনের বিধিমালা চূড়ান্ত করতে সর্বোচ্চ তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা থাকলেও কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন ৩ বছর হতে চললেও এখনও বিধিমালা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, বর্তমানে খসড়া নীতিমালাটি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত করার পর এটি গ্যাস আইন বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় এবং রাজস্ব ফাঁকির একটি অন্যতম কারণ অবৈধ সংযোগ। এর কারণে একদিক যেমন গ্যাসের সমবণ্টন হয় না, গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। তাই সাধারণ সংযোগ, মিটার এবং সিএনজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগের জরিমানার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বিধিমালায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্পূর্ণ চোরাইভাবে বাইপাস লাইন মিটার ট্যাম্পারিং, খাতায় নাম-ঠিকানা না তুলেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ ইত্যাদি নানা কৌশলে গ্যাস চুরি-লোপাটের ঘটনা অবলীলায় ঘটে চলছে। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সংঘবদ্ধ গ্যাস- চোর-লুটেরাদের নানা ধরনের তদবিরের কারণে এসব অভিযান খুব একটা কাজে আসে না। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বাসাবাড়ি, হাউজিং কমপ্লেক্স, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিএনজি স্টেশনসমূহে চোরাই গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ দিয়ে এবং অনেক জায়গায় অনুমোদনের অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে এসব দুর্নীতিবাজ চক্র প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, শুধুমাত্র রাজধানীতেই এরকম অবৈধ ও অনৈতিক সংযোগের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এসব চোরাই অবৈধ সংযোগ থেকে সরকার এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না। অথচ প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছে লুটেরা চক্র। এসব অপতৎপরতা বন্ধ করতে একটি গ্যাস বিপণন বিধিমালা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন জ¦ালানি খাতসংশ্লিষ্টরা। জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খসড়া গ্যাস বিপণন বিধিমালাটি দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, গ্যাস বিপণন বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে পেট্রোবাংলাসহ অন্যান্যের আগ্রহ খুব কম। বিধিমালাতে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার গত এক বছর আগেও জ¦ালানি বিপণন ব্যাপকভাবে বেসরকারি কোম্পানির হাতে ছাড়তে চায়নি, এখন যা চাওয়া হচ্ছে। এসব কারণে পেট্রোবাংলার কাঁটছাট করতে হচ্ছে। আজকে একরকম চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে দুই এক মাসের মধ্যে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে গ্যাস বিপণনে যে আগের বিধিমালা ছিল তাকে যুগোপযোগী করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে এতদিন দেরির বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে বেসরকারি উদ্যোক্তারা জ¦ালানি আমদানি করে বিপণন করতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়টিও রয়েছে। ফলে গ্যাস বিপণন বিধিতে এসব কিছুর ছাপ থাকতে হবে। জানা গেছে, ৭৮ পৃষ্ঠার এই বিধিমালাতে গ্যাস বিপণন এর সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জানা যায়, আবাসিক বা বাণিজ্যিক যেকোনো ধরনের গ্যাস সংযোগ অবৈধ শনাক্ত হলে সেই গ্রাহককে ১২ মাসের (এক বছর) সমপরিমাণ বিল জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। অবৈধ গ্যাসের অপব্যবহার রোধ, সুষম বণ্টন নিশ্চিত, গ্যাসের লোড সমন্বয় এবং সর্বোপরি রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই বিধিমালায়। খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, মিটারযুক্ত গ্রাহক গ্যাস কারচুপি বা অননুমোদিত গ্যাস ব্যবহার করলে অস্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ অপরাধ অনুযায়ী জরিমানা দিতে বাধ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ থেকে সর্বনিম্ন ৩ মাসের বাড়তি বিল জরিমানা দিতে হবে গ্রাহককে। রেগুলেটর বা রেগুলেটরের চাপ অননুমোদিতভাবে বা অবৈধভাবে পুনঃস্থাপন বা পুনর্নির্ধারণ করে নির্ধারিত চাপের বেশি চাপে গ্যাস ব্যবহার করলেও উপর্যুক্ত নিয়মে জরিমানার আওতায় আসবেন গ্রাহক। এদিকে শিল্প গ্রাহক ঘণ্টাপ্রতি লোড ৪ হাজার ঘনফুটের নিচে গ্যাস কারচুপি বা গ্যাসের অপব্যবহার করলে অস্থায়ীভাবে লাইন বিচ্ছিন্নকরণসহ দুই থেকে ছয় মাসের অতিরিক্ত বিল জরিমানা দিতে হবে। বিধিতে আরও বলা হয়েছে, গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত কোনো শর্ত ভঙ্গের কারণে গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন হলে, এরপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করলে পরিদর্শনের তারিখ থেকে শনাক্তকরণ তারিখ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ মাসের গ্যাস বিলের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস বিপণনে অনিয়ম বন্ধে দ্রুতই বিধিমালাটি চুড়ান্ত করতে হবে।