November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 23rd, 2022, 9:00 pm

ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বাড়ছে, ডুবছে ফসল

পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ যমুনার পানি বৃদ্ধিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এতে পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদীর নিম্নাঞ্চলের (চরাঞ্চলের) বিভিন্ন ফসলের খেত তলাতে শুরু করেছে। এছাড়াও ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতে।

গত এক সপ্তাহ যাবত ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই নদীতে ছয় দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিনই বাড়ছে পানি।

আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে এই পানি চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান খেতে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অপরিপক্ব ফসল ঘরে তুলছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর বিভিন্ন জমির ফসল। এর মধ্যে বেশিরভাগই বাদাম। এছাড়া তিল ও ধানও রয়েছে।

সরেজমিনে রবিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন। এছাড়া ধান ও তিলও তুলতে দেখা যায়। নদীর অপরপ্রান্তেও তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের খেত।

পালডাঙ্গি এলাকার কৃষক রমজান আলী ভূঁইয়া জানান, আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। ৪/৫ দিন পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেতো। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম এখনও পরিপক্ব হয়নি। তুলে নিয়ে গরু, ছাগলকে খাওয়াবো। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।

আরেক কৃষকের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের সারা বছরের সংসার খরচ চলে, কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেলো। গত কয়েকদিন যাবত পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না।

আরেক কৃষক শেখ জুলমত হোসেন বলেন, ১০ বিঘা জমিতে বাদাম ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর মাত্র ১০ দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে উঠাতে পারতাম। পানি বৃদ্ধির ফলে এখনই তুলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু আমাদের এলাকা নয়, চরাঞ্চলের একশ’ একরের বেশি জমিতে লাগানো বাদাম, তিল ও ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

মুরাদ হোসেন নামের অপর এক কৃষক বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করেই যা রোজগার হয় তা দিয়েই সারা বছরের সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেলো। অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলে এই কৃষকেরা বেঁচে থাকতে পারবে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু জানান, হঠাৎ করেই উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ বাসিন্দারাই বাদাম চাষ করে থাকে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাদাম খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বাদাম অপরিপক্ব অবস্থায় তুলে ফেলতে হচ্ছে। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওদের অন্যতম আয়ের উৎস এই বাদাম।

পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার সালমা খাতুন জানান, বর্তমানে পদ্মার পানি ছয় দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এবছর পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এছাড়া পাঁচ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী বলেন, হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। পানি প্রবেশ করায় বাদাম, তিল ও ধানের কিছু খেত তলিয়ে গেছে। এখনও বাদাম পরিপক্ব না হলেও খেতে পানি ঢোকার কারণে তুলে ফেলতে হচ্ছে; এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পদ্মায় এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত সাত দিনে দুই মিটার পানি বেড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

—ইউএনবি