April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 14th, 2021, 9:17 pm

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন

নিউজ ডেস্ক :
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান ঘটল রোববার। সরকার গঠনের আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিরোধী দলগুলোর জোট। এরইমধ্যে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক নাফতালি বেনেত। ডান-বাম এবং মধ্যপন্থী সাতটি দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন জোট সরকার রোববার বিকেলে ৬০-৫৯ ভোটে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ক্নেসেটের অনুমোদন পেয়েছে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এ অধিবেশন চলে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন বেনেত। তারপর তাকে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে মধ্যপন্থী রাজনীতিক ইয়ার লাপিদর হাতে। ইসরায়েলের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এই জোট কতদিন টিকবে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংকট নিয়ে নতুন এই সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেনেতের রাজনৈতিক আদর্শ, তার বিশ্বাস, ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে তার অতীতের বক্তব্য-বিবৃতি বিবেচনা করলে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ আপাতদৃষ্টিতে নেই। খবর বিবিসির। বেনেত একসময় নেতানিয়াহুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে দুই বছর তিনি নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে অবশ্য তার সাথে নেতানিয়াহুর মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে তিনি কট্টর ইহুদি দল ‘জিউয়িশ হোম’ পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে প্রথম এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। তার কট্টর ডানপন্থী আদর্শ নিয়ে তার কোনো রাখঢাক নেই। বিভিন্ন সময় তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহুর চেয়েও তিনি বেশি ডানপন্থী। উদারপন্থী ইহুদিদের সুযোগ পেলেই উপহাস করেন। অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের স্থায়ী কর্তৃত্ব এবং সার্বভৌমত্ব কায়েমের পক্ষে বেনেত। কট্টর ইহুদিদের মত তিনি বিশ্বাস করেন, ঐতিহাসিকভাবে এসব এলাকা ইসরায়েলের এবং সে কারণে পশ্চিম তীরকে তিনি সবসময় হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত ‘জুদেয়া-সামারিয়া’ নামে অভিহিত করেন। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক তিনি। একসময় তিনি ইহুদি বসতি-স্থাপনকারীদের সংগঠন ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। তাকে মানুষ চেনে ‘বসতি-স্থাপনকারীদের নেতা’ হিসেবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোরবিরোধী তিনি। বিভিন্ন সময় তিনি ফিলিস্তিন সমস্যাকে ইসরায়েলের ‘পশ্চাৎদেশের ওপর বিষফোঁড়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। যে সাতটি দলের জোটের শরিক হিসেবে বেনেত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেখানে ইসলামপন্থী একটি আরব দল ছাড়াও মেরেতজের মত বামপন্থী দল রয়েছে যারা পশ্চিম তীরে ইহুদি দখলদারিত্বে ঘোরবিরোধী। জেরুজালেমে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারিন্দার মিশ্র মনে করেন, ক্ষমতায় গিয়ে শরীকদের সঙ্গে আপস করা ছাড়া হয়তো কোনো কোনো উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি হোক বা ইসরায়েলে সমকামীদের অধিকারের প্রশ্ন হোক – যে কোনো ইস্যুতেই জোটের শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হবে। কিন্তু সরকার টিকিয়ে রাখতে যে আপস করতে হবে, সেটা তারা সবাই অনুধাবন করে। তিনি আরও বলেন, প্রথমত বেনেত এবং শরিকরা জানেন তাদের ভেতর মত-পার্থক্য চরমে গেলে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। দ্বিতীয়ত, এই শরিকে যোগ দিয়ে বেনেত নিজে বিরাট ঝুঁকি নিয়েছেন। তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। সুতরাং এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে ইসরায়েলের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারেন বেনেট। ফলে সেই ভয়েই তিনি আপস করবেন বলে আমার ধারণা। তবে, পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতি এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নতুন সরকার এখন এড়িয়ে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বেনেত যে আপোষে প্রস্তুত তার কিছুটা ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। শুক্রবার জোটের শরিকদের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর বেনেত বলেন, তার সরকার ইসরায়েলের সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে কাজ করবে-ধার্মিক, ধর্ম-নিরপেক্ষ, অতি-ধার্মিক, আরব – সবার জন্য সমানভাবে সরকার কাজ করবে। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হবো। ক্ষমতা থেকে নেতানিয়াহুর প্রস্থান এবং ক্ষমতায় বেনেতের আগমনকে ফিলিস্তিনিরা কীভাবে দেখছে সে প্রসঙ্গে হারিন্দার মিশ্র বলেন, ফিলিস্তিনিরা এখন মনে করে, ইসরায়েলে ক্ষমতার রদবদলে তাদের ভাগ্যের কোনো বদল হবে না। তবে, আরব-মুসলিম একটি দলের (মনসুর আব্বাসের ইউনাইটেড আরব লিস্ট) সমর্থন পেতে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি আরব নাগরিকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কিছু সমঝোতা হয়েছে। আরব শহরগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সেইসঙ্গে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অনুমোদন-হীন বাড়ি ভাঙা বন্ধ রাখার চুক্তি হয়েছে। হারিন্দার মিশ্র বলেন, সাধারণ ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, নতুন সরকার অন্তত মন্দের ভালো হতে পারে। তাদের জীবনমানের কিছু উন্নতি হয়তো হবে।