নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলাকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে । মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে সংসদ সদস্য, পনির উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার এবং ফুলবাড়ী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস । উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর বিবিএফজি প্রজেক্টের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আরডিআরএস বাংলাদেশ এর তপন কুমার সাহা এবং আবদুল্লাহ আল মামুন ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর র্গালস (বিবিএফজি) প্রকল্পের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশস্থ সুইডেন দূতাবাস এর অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সহযোগী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ।
বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি; উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রমকে আরও সক্রিয়, বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে ফুলবাড়ীকে চূড়ান্তভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করাই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
প্রধান অতিথি বলেন, ”বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজী, ইমাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সমাজের প্রতিনিধি সবাইকে অনুরোধ করছি তাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে এক সাথে কাজ করার জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে অবশ্যই আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারবো”।
জেলা প্রশাসক বলেন, ”আমরা সবই পারি। ২০১৭ সালে ফুলবাড়ী উপজেলায় বাল্যবিবাহের হার ছিল ৬৫%; ২০২১ সালে সেটা নেমে হয়েছে ৪%। এটি আমাদের একটি অর্জন। । বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমরা চ্যাম্পিয়ন ফাদার, চ্যাম্পিয়ন মাদার নির্বাচন করেছি। বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে আছে এমন মেয়ে শিশুর তালিকা তৈরি করেছি। আমাদের সবাইকে সম্মিলিত ভাবে আরো কাজ করতে হবে এই অর্জনকে ধরে রাখার জন্য”।অনুষ্ঠানের বিশেষ আর্কষণ ছিলো প্রধান অতিথিদের বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলার ফলক উন্মোচন, বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড দেখানো এবং বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণায় উপস্থিত সকলকে সাথে নিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফুলবাড়ী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস, বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত ফুলবাড়ীর বর্তমান তথ্য এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে বিবিএফজি প্রকল্পের প্রধান প্রধান অর্জন উপস্থাপন করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলাকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যদের অংশগ্রহণে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) এর গাইডলাইন অনুযায়ী সকল ইউনিয়নকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা হয়েছে।
বাল্যবিবাহের ঝুঁকিপূর্ণ ২৮৫ মেয়েশিশুর পরিবারকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা বাল্য বিবাহ না দেয় এবং মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যায়। কন্যাশিশুদের মধ্যে বাইসাইকেল চালানো ও ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, জেন্ডার ইকুইটি মুভমেন্ট ইন স্কুল মডিউল বিষয়ে ৫৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ২১৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা তাদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বয়:সন্ধিকালীন পরিবর্তন এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পাঠদান করতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন ফাদার কর্তৃক বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে সেশন পরিচালনা করা হয়েছে। নিকাহ নিবন্ধক সহ যারা বিবাহ পড়িয়ে থাকেন যেমন ঈমাম, ঘটক ও পুরোহিতদের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও বয়স যাচাই করণের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে ফুলবাড়ী উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের অংশগ্রহণে মতিবিনময় সভার আয়োজন করা, এলাকায় বাল্যবিবাহের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বিবিএফজি প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো-বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা গঠনে কুড়িগ্রাম জেলার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা যাতে, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে কোন কন্যা শিশুর বিয়ে না হয় এবং ১৮ বছরের নিচে কন্যা শিশুর বিয়ের হার এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে। সর্বোপরি কুড়িগ্রাম জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। #
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি