নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বজুড়ে বিগত ২০১৯ সালের শেষদিকে করোনা মহামারীর সংক্রমণ শুরু হয়। আর দেশে দেশে ওই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। দেশে ফিরে ওসব প্রবাসীরা বেকার অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ আর্থিক কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনে সরকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ শ্রমিক ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা পাবে। পাশাপাশি পুনরায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ, দশে কাজের সংস্থান, ব্যবসার পুঁজি জোগান- এমন নানা সুযোগ-সুবিধাও সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। ওই প্রকল্পে অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ফেরত আসা প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বেশি মজুরি পাওয়ার উপযোগী কর্মী তৈরি করা, ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেয়া, কারিগরি এবং অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে দেয়া। আর সব সেবা নিশ্চিত করতে একটি তথ্যভান্ডার করা হবে। সেখানে প্রবাসীদের সব ধরনের তথ্য থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশী কর্মী ফেরত আসা শুরু হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে গত বছরে মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার শ্রমিক ফেরত আসে। তার মধ্যে সৌদি আরব, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক দেশে ফেরত আসে। ওসব প্রবাসীর মধ্যে ২০২০ সালে ফেরত আসা ২ লাখ প্রবাসী শ্রমিক প্রকল্পের আওতায় সুযোগ-সুবিধা পাবে। দেশের ৩২টি নির্দিষ্ট জেলার প্রবাসী শ্রমিকরাই তাতে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশন প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। আর প্রকল্পটির উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। আগামী ২০২৩ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৪২৫ কোটি টাকাই দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ বিদেশ ফেরত শ্রমিককে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে নগদ অর্থ হিসেবে প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। ফেরত শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মী বাছাই করে সরকারের বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সনদের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশে-বিদেশে চাকরিতে তারা বিশেষ সুবিধা পায়। তাছাড়া আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও ঋণ সুবিধা পাওয়াসহ সব ধরনের সেবা সহজ করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসার উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আর্থিক ও পরামর্শ সুবিধা দেয়া হবে।
সূত্র আরো জানায়, ফেরত আসা প্রবাসীদের সহায়তা প্রকল্পের আওতায় থাকা জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ।
এদিকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব শরিফা খান জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে ফেরত আসা অসহায় প্রবাসী শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়ার প্রচেষ্টা আছে। প্রকল্পে কেবল ২০২০ সালে ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদেরই সেবা দেয়া হবে। পরে ওই ধরনের আরো উদ্যোগের মাধ্যমে বাকিদেরও সুবিধার আওতায় আনার কথা আছে। আপাতত দেশের ৩২টি জেলার ফেরত প্রবাসীরা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। আর প্রবাসী শ্রমিক অধ্যুষিত জেলাগুলোকেই প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম