জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
বৃষ্টির পানিতে আবারও ডুবল সিলেট মহানগরীর শতাধিক এলাকা। শনিবার (৮ জুন) রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার রেকর্ড ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ল সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা। এ নিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হলো নগরীর বাসিন্দাদের। রাস্তাঘাট ডুবে ড্রেনের পানিতে একাকার হয়ে বাসাবাড়িতে উঠেছে ময়লা পানি। এমনকি সিলেটে চিকিৎসা সেবার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলেজেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে মধ্য রাতে চরম দুর্ভোগে পড়েন চিকিৎসারত রোগীরা।
এর আগে ২ জুন রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন অধিকাংশ এলাকার পানি পরদিন নেমে গেলেও অন্তত ১২টি এলাকার পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। এ অবস্থায় গতকাল আবার ডুবল শহর।
গতকাল রাত ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের দরগামহল্লা, পায়রা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকায় পানি থইথই করছে। ঘরমুখী মানুষেরা যানবাহনের অভাবে পানি মাড়িয়ে হেঁটেই ফিরছিলেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে গত ২৯ মে মধ্যরাত থেকে সিলেটের ১০টি উপজেলা ও নগরে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে পানি নামতে শুরু করায় কয়েক দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হলেও সুরমা নদী টইটম্বুর। এতে নগরে ভারী বৃষ্টি হলে নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খাল দিয়ে পানি নদীতে মিশতে পারছে না। এ কারণে গতকাল বৃষ্টি হলে নগর মুহূর্তেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
বাগবাড়ি বর্ণমালা পয়েন্ট এলাকায় ঊরুসমান পানি জমে। এখানকার বাসিন্দা অরিন্দম রায় বলেন, টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রচুর পানি মূল রাস্তায় জমে যায়। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এতে ওই এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। এ ছাড়া অনেক বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
একাধিক বাসিন্দা বলেন, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের সব নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকে রাতের খাবার প্রস্তুত করার আগেই রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন। এ ছাড়া অনেক বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে ময়লা-আবর্জনাও ঢুকে পড়েছে। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহান লোকজন। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন গত দেড় দশকে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
উপশহর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এক সপ্তাহ না পেরোতেই আবার ভারী বৃষ্টিতে উপশহর এলাকা ডুবেছে। মুহূর্তেই এই এলাকার বিভিন্ন ব্লক কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই উপশহর এলাকা ডুবে যায়, এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই উপশহর এলাকাই নগরে সবচেয়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, রাতে হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের বিকল্প ওয়ার্ডে একীভূত করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর গতকাল গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বৃষ্টির পানি দ্রুত নামার জন্য কাজ করছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাত্র ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাতের কারনে কিছুক্ষন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিলো। তবে সকাল হওয়ার আগেই পানি নেমে গেছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি