November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, April 16th, 2022, 7:40 pm

বকেয়া আদায় নিয়ে বিপাকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে কর্মরত অর্ধডজন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বিপুল পরিমাণ বকেয়া গ্যাস বিল আদায় নিয়ে বিপাকে রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর অনাদায়ী বকেয়ার পরিমাণ ৯ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের বিল অনাদায়ী হয়ে এত বিপুল টাকা বকেয়া পড়েছে। কিন্তু ওই গ্যাসল বিল আদায়ে কোনো নির্দিষ্ট আইনি কাঠামো নেই। অথচ পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস না থাকায় সরকার উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সরবরাহ করছে। কিন্তু গ্রাহক যথাসময়ে গ্যাস বিল পরিশোধ না করার কারণে বকেয়ার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। আর গ্যাস বিলের ওই বিপুল অর্থ বকেয়া থাকায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর তারল্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানির কাছে ৩ হাজার ৩৮ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। আর শিল্প মন্ত্রণালয়ে ওই বকেয়ার পরিমাণ ২১০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। গ্যাস বিল বাবদ বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য জ¦ালানি বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত ৪২টি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দপ্তর ও কমিশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বকেয়া আদায়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২০ সালের মার্চে বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও পাইপলাইন অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি প্রতি মাসে নিয়মিত সভা করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাছাড়া গ্যাস বিলের বকেয়া আদায় এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য দুটি মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়। বর্তমানে দেশে গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণে মোট ১১টি কোম্পানি নিয়োজিত। তার মধ্যে ৬টি বিতরণ কোম্পানি বেসরকারি খাতের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করছে। গৃহস্থালি পর্যায়ের পাশাপাশি ওসব কোম্পানির গ্যাস বিল বকেয়া রাখা গ্রাহকের তালিকায় বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইটভাটা ও চা বাগানের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে মোট ৯ শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া পরিশোধে গ্রাহকরা কয়েক দফা সময় চাইলেও ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। ফলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো শিগগিরই ওই বকেয়া আদায়ের পথ দেখছে না।
সূত্র আরো জানায়, তিতাস হচ্ছে পেট্রোবাংলার অধীনে থাকা দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিগত ২০১৯ সালে কোম্পানিটির দুর্নীতির উৎস নিয়ে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাসের অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে তিতাস গ্যাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। অবৈধভাবে বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের লোড নেয়া হয় এবং লোড বাড়ানো হয়। সেখানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, অবৈধ সংযোগের কারণে তিতাসে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস হয়। ঢাকার আশপাশ এলাকাগুলোয়, বিশেষ করে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য পাওয়া যায়। গৃহস্থালির চেয়ে শিল্পেই বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বাইরের কিছু যোগসাজশে ঘুসের বিনিময়ে স্বাভাবিক সংযোগের পাশাপাশি চোরাই সংযোগ দেয়। ফলে বেশ বড় অংকের অর্থ থেকে বঞ্চিত হয় তিতাস। পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা অনাদায়ী বকেয়া বিল তিতাসের জন্যও বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিপুল বকেয়া বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। ওই আলোচনা শেষে বকেয়া আদায় বাড়ানোর জন্য কঠোর হতে সুপারিশ করে কমিটি। সংসদীয় কমিটির সদস্যদের মতে, গ্যাস বিল যুগ যুগ ধরে অনাদায়ী থাকা সমীচীন নয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বকেয়া আদায় সম্পন্ন করা উচিত। অন্যথায় কোনো সংস্থার মাধ্যমে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ওই সময় বকেয়া আদায়ে নির্দিষ্ট কোনো আইনি কাঠামো না থাকার কথাও উঠে আসে।
অন্যদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ জানান, তিতাস গ্যাসে সরকারি পর্যায়ে বকেয়ার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কিছু বকেয়া আছে। তাছাড়া মামলাজনিত কারণেও কিছু বকেয়া আছে।