September 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 8th, 2024, 7:37 pm

বগুড়ায় রথযাত্রায় নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

সনাতন ধর্মালম্বীদের রথযাত্রার সময় বগুড়ার সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় হতাহতের ঘটনা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রথযাত্রার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ নিহত ও ৪৩ জন আহত হন।

এরপর রাতেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রদান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

রবিবার রাতেই নিহতদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুন্দুগ্রামের ভবানী মোহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত, শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকার মন্তেস্বরের স্ত্রী আতশী, শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের সুদেবের স্ত্রী রনজিতা, শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের মৃত নারায়ণ কুমারের ছেলে অলক কুমার ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার বাসুদেব সাহার স্ত্রী জলি সাহা।

আহতদের মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এখনও ৪৩ জন চিকিৎসাধীন। বিদ্যুৎ স্পর্শে সৃষ্ট আগুনে অনেকের শরীর ঝলসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যসহ রথযাত্রায় অংশনেওয়া শত শত মানুষ শজিমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভিড় করেন।

ওই হতাহতের ঘটনার পর রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়। দুর্ঘটনার পরপরই বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রর্বত্তী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটন শজিমেক হাসপাতালে যান।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সৎকারের জন্য প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরের কাছে সেউজগাড়ি পালপাড়া এলাকায় রথযাত্রার উদ্বোধন করা হয়। এরপর রথটি ৫০০ গজ পূর্ব দিকে সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে পৌঁছার পরই রথের লৌহ দণ্ডটি সড়কের ওপরের ১১ হাজার ভোল্টের তারের সংস্পর্শে আসে। তখনই আগুন ধরে যায়। এ সময় হুড়োহুড়িতে মানুষ সড়কের ওপর পড়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৩৮ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ২ জন আইসিইউতে রয়েছেন।

বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে একজন মারা গেছেন এবং সেখানে আরও ৩ জন চিকিৎসাধীন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, রথ যাত্রার শুরুতে দুঃখজনখ হতাহতের ঘটনার পর রথযাত্রাটি কিছু সময় থামিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে পরে সেটি শুরু করা হয় এবং সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করা হয়।

নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ এর আব্দুল মান্নাফ জানিয়েছেন, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রথের গাড়িতে বিদ্যুৎ স্পর্শের ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।

সড়কের ওপর সরবরাহ লাইনের তার খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১১ হাজার ভোল্টের তারগুলো এভাবেই রাখা হয়। শুধু বগুড়ায় নয় বরং সারাদেশেই এভাবে রয়েছে।’

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের যে তার সড়কের ওপর দিয়ে পারাপার করা হয়েছে সেগুলোর উচ্চতা ছিল ১০ মিটার। ধারণা করা হচ্ছে রথের গাড়িতে এমন কোনো উঁচু দণ্ড যুক্ত করা হয়েছিল যেটি বিদ্যুৎ পরিবাহী। আর সে কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

—–ইউএনবি