November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, March 3rd, 2022, 9:04 pm

বজ্রপাত থেকে রক্ষায় প্রকল্পের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে আমাদের দেশে বজ্রপাতের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। গত বছর এ চার মাসে (মার্চ-জুন) দেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়। সারা বছরে মারা যান সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ। পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে ২ হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ায় ২০১৬ সালে সরকার এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর বজ্রপাত থেকে রক্ষায় নানা ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়। কিন্ত কয়েক বছর পেরিয়ে গেলে প্রায় সব কিছুই রয়ে গেছে প্রাথমিক পর্যায়ে। পাশাপাশি দু’টি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে একই রকমের উদ্যোগ। জানা গেছে, বজ্রপাত থেকে রক্ষায় একটি প্রকল্প রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের, যার মাধ্যমে বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন এবং মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল ভয়েস ও মোবাইল টেক্সট মেসেজের সাহায্যে বজ্রপাত আঘাত হানার আগে কৃষকসহ অন্যান্যের সতর্ক করা হবে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টিও রয়েছে প্রকল্পের মধ্যে। এদিকে ঠিক একই রকম একটি প্রকল্প নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে হাওরাঞ্চলে বজ্রপাতে বহু কৃষকের প্রাণহানি হয়। এ থেকে কৃষকসহ অন্যান্য মানুষকে রক্ষায় এই প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়ের। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘হাওরাঞ্চলে কৃষকদের জীবনের সুরক্ষায় বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা, এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করার পরই এ নিয়ে কাজ করা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকদের সুরক্ষা দেওয়ার কাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তাই কৃষকদের জন্য যে কোনো প্রকল্প মন্ত্রণালয় নিতে পারে। উল্লিখিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমে আসবে বলেও মনে করছে উভয় মন্ত্রণালয়। তবে দু’টি মন্ত্রণালয়ের একই রকম প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যালোচনা সভা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। সভায় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মতোই। এটি দ্বৈততা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া এ কাজ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের হাওরাঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সংবলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে (পাইলট প্রকল্প) হাওর এলাকায় ১ কিলোমিটার পরপর ১ হাজার বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ছাউনির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম ও জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। হাওরাঞ্চলে এক কিলোমিটার পরপর নির্মাণ করা হবে বজ্রপাত-নিরোধক এক হাজার কংক্রিটের ছাউনি। মেঘ ডাকার আওয়াজ পেলেই মাঠের কৃষকসহ মানুষজন এসব শেল্টার ছাউনিতে আশ্রয় নিতে পারবে। প্রতিটি শেল্টারে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ বসানো হবে। আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম, অর্থাৎ বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত দেবে সেই যন্ত্র। মোবাইলের মাধ্যমে এ সতর্কবার্তা মাঠের কৃষকসহ সবার কাছে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় জনসচেতনতা বাড়ানো হবে বলেও জানান ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলার ৫৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। হাওর এলাকার চারটি উপজেলার কৃষিজমিতে পাইলট আকারে ১০০ থেকে ১২০ বর্গমিটার ব্যাসার্ধের ১৬টি আর্লি স্টিমার ইমিটার (ইএসই) নামক বজ্র-নিরোধক স্থাপন করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী ‘আর্থ নেটওয়ার্কস লাইটিং অ্যান্ড সিভিয়ার ওয়েদার আর্লি ওয়ার্নিং সল্যুশন’ এর মাধ্যমে সেন্সরভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’ এবং ‘ক্লাউড টু ক্লাউড লাইটনিং ডিটেকশন সিস্টেম’- যা মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল ভয়েস ও মোবাইল টেক্সট মেসেজের সাহায্যে বজ্রপাত আঘাত হানার সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট আগে প্রকল্প এলাকার কৃষকদের সতর্ক করবে। একইসঙ্গে কৃষকসহ প্রকল্প এলাকার মানুষকে সচেতন করার কাজও করা হবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায়। মূলত বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তা থেকে রক্ষা বা আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া এবং আন্যান্য দুর্যোগ থেকেও সবাইকে রক্ষা ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন সংক্রান্ত সব কাজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ম্যান্ডেট (কোনো কাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত)। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পের সঙ্গে দ্বৈততা সৃষ্টি করবে কি না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, বজ্রপাত ও এ-সংক্রান্ত বিষয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ম্যান্ডেট। ফলে প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ডিএই (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর)’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় দু’টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাধারণ মানুষদের দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার জন্য দুটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে এবং অপরটি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সবুজপাতাভুক্ত। যেটির ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ডিপিপির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ চলতি বছরে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো আশা নেই।