নিউজ ডেস্ক :
ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ব্যক্তিগত কারণে গাইবান্ধায় তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে রংপুরে তার প্রথম স্ত্রীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে তিনি গাইবান্ধা ছিলেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রংপুর ডিবির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি কর্মকর্তারা। উদ্ধারের পর তাকে রংপুর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ত্ব-হা রংপুর নগরীর কলেজ রোডে চারতলা মোড়ে প্রথম স্ত্রীর ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এরপর তাকে সেখান থেকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ত্ব-হার পারিবারিক বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায়। তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। গতকাল শুক্রবার সেখান থেকেই তাকে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়। তার ঢাকার পল্লবীর লালমাটিয়া এলাকার এক বাসায় থাকেন ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বাড়ি ফিরে আসার পর ত্ব-হাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে মারুফ হোসেন বলেন, ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ও তার সফরসঙ্গীরা ১০ জুন রাতে ঢাকার গাবতলী থেকে রংপুরের পথে রওনা হন। এরপর গাইবান্ধা ত্রিমোহনীতে তাদের পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করেন। সেখানে তার সঙ্গে আবদুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে ত্ব-হার কাছে রেখে দেন। মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণেই তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় ত্ব-হা তার সফরসঙ্গীদেরকে জানান যে, তিনি ব্যক্তিগত সমস্যায় ভুগছেন। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ করে আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাদের এই আত্মগোপনে থাকার দাবি রাষ্ট্র বা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার জন্য কোনো ষড়যন্ত্র কি-না, তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবু ত্ব-হাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। ত্ব-হার উদ্ধৃতি দিয়ে উপপুলিশ কমিশনার বলেন, ত্ব-হা আমাদেরকে তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। আমরা তাকে রাতে রংপুর কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করব। থানা কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে তাকে আদালতে নেয়া প্রয়োজন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে মুখে আনতে চাই না। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে তা জানানো হয়। গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না আবু ত্বহা, তার দুই সঙ্গী আবদুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনের। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে ওই তিনজনসহ আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে তিনি সাভারে যাচ্ছেন বলে তার মাকে জানান। এরপর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আদনানের। তিনি সাভার যাচ্ছেন বলেই জানান স্ত্রীকে। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে না পেয়ে ১১ জুন বিকেলে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন ত্ব-হার মা আজেদা বেগম। তার খোঁজ চেয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনও করেন দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারা। তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার ত্ব-হার খোঁজ মেলে। বিপ্লব মিয়া নামে এক প্রতিবেশী জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হাকে তার শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মন্ডলের বাড়িতে ঢুকতে দেখেন তিনি। পরে তাকে রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টার পাড়ার ওই বাড়ি থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, মা ও ভাইয়ের জিডির সূত্রে আমরা (ত্ব-হার) অনুসন্ধান করতে থাকি। আজকে (গতকাল শুক্রবার) আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি ত্ব-হা তার (রংপুর নগরের) চারতলার মসজিদে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আছেন। সেই সংবাদ পেয়ে আমরা তাকে নিয়ে আসি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমরা অপর সঙ্গীদেরও সন্ধান পাই।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক