নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে মোবাইল ফোনের একটি বিশাল বাজার রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে এর আয়তনও বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালিত হওয়ায় মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তবে এই সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে আশঙ্কাও। বৈধ পথের পাশাপাশি দেশে অবৈধ পথেও ঢুকছে মোবাইল ফোন। সেই ফোনের সংখ্যা আবার কম নয়, দেশে বিক্রি হওয়া মোট মোবাইলের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অবৈধ পথে দেশে আসা মোবাইলের এই বাজারকে বলা হয় গ্রে মার্কেট। কিছুদিন আগেও যা খুব একটা বড় ছিল না। সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে গ্রে মার্কেটের পরিসর। মোবাইল বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশনের সময় দেশে অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসার পরিমাণ কমে গিয়েছিল। হ্যান্ডসেটের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবারও বাড়তে শুরু করে। এখনও মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে, তবে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যেকোনও (বৈধ ও অবৈধ) ফোন চালু করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সেটসহ আইএমইআই ডাটাবেজে (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ফোন ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নিবন্ধিত হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হওয়া স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলার উদ্বোধন শেষে মোবাইল ফোন সংশ্লিষ্টরা গ্রে মার্কেট নিয়ে তাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কথা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে জানান। মন্ত্রী তখন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ফোনের বিক্রি কম থাকে। অন্যদিকে মহামারিও বাজারের গতি কমিয়ে দিয়েছে ঢের। মার্চ থেকে বাজার স্বাভাবিকভাবেই ভালো হতে শুরু করে। দুই ঈদের বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা সাধারণত ক্ষতি পুষিয়ে নেন। কিন্তু গ্রে মার্কেট বড় হওয়াতে চ্যানেল পণ্যের বিক্রি কমবে বলে তাদের আশঙ্কা। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, গ্রে মার্কেটের ইস্যুটা আমরা বুঝি। কিন্তু আমরা দেখলাম রেজিস্ট্রেশনের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রবাসীরা দেশে আসার সময় একটা দুটো করে ফোন নিয়ে আসেন। তারা এ দেশে সেই মোবাইল সেট চালু করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। আমরা মানুষের ভোগান্তি বাড়াতে চাইনি। আমরা চেয়েছি মোবাইল সেট চালু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। আইএমইআই ডাটাবেজেও নম্বরটি সংরক্ষিত হবে। এজন্য নিবন্ধনের বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়। এই সুযোগে হয়তো কিছু সেট বিভিন্নভাবে দেশে ঢুকছে। তিনি আরও বলেন, দেশে অবৈধভাবে যেসব মোবাইল সেট ঢুকছে সেগুলো কাস্টমস দেখবে, সীমান্তরক্ষীরা দেখবে। এখানে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভূমিকা রাখা জরুরি। আমরা বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিচ্ছি। মাঝে মাঝে অভিযানও পরিচালনা করছি। দেশের মার্কেটগুলোতে বৈধ পথে আসা (চ্যানেল প্রোডাক্ট) এবং অবৈধ পথে আসা (নন চ্যানেল বা গ্রে প্রোডাক্ট) দুইই পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই নন চ্যানেল পণ্য কিনতে আগ্রহী হন। অনেক সময় এসব ফোনে সমস্যা হয়, আবার হয়ও না। নন চ্যানেল পণ্য যারা বিক্রি করেন তারাও মাঝে মাঝে ওয়ারেন্টি দেন। বিক্রেতারা বলেন, চ্যানেল পণ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা পান ক্রেতারা। নন চ্যানেল পণ্য পান কম দামে। এ কারণে দিনে দিনে আবার নন চ্যানেল পণ্য কেনার হার বাড়ছে। বাজারটা বড় হতে হতে এখন ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এতে কমছে এ খাতের রাজস্ব। কারণ নন চ্যানেলে আসা পণ্যে সরকার কোনও রাজস্ব পায় না। এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এর সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহীদ বলেন, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বড় হচ্ছে গ্রে মার্কেট। সরকার হ্যান্ডসেটের রেজিস্ট্রেশন চালুর পর এই বাজার ১০ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। এখন তো আগের অবস্থানকেও ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, দেশে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। বৈধপথে আসা এবং দেশে উৎপাদিত মোবাইলের সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ করলে তা আরও বেশি হতো। মোবাইল ফোন আমদানিকারকরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে ধরে খারাপ যাওয়ার পর মার্চ থেকে বাজার ভালো হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গ্রে মার্কেট সেটা হতে দেবে না। এই মার্কেট শক্তিশালী হলে যারা বৈধপথে মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন তাদের বিক্রি কমে যায়। অবৈধ মোবাইল ফোনের সংখ্যা কমে যাওয়ার সময় বিক্রিও বেড়েছিল। তাতে করোনাকালের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন অবৈধ মোবাইল বন্ধ করা না গেলে আবার তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এছাড়া অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসার কারণে বৈধ পথে আমদানি কমে যাচ্ছে বলে মনে করছে বিএমপিআইএ। তারা বাজারের এই অধোগতির মূল কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা অবৈধ ও চোরাই পথে মোবাইল আমদানির বিস্তারকে চিহ্নিত করেছেন। তদারকি সংস্থার অপর্যাপ্ত নজরদারি ও অভিযানের সুযোগে স্থানীয় বাজারে এদের প্রভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে বলে তাদের অভিযোগ। এছাড়া অবৈধ পণ্যের অনেকাংশই পুরনো ফোন ‘রিফারবিশ’-এর মাধ্যমে দেশে আসছে। তাতে গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদে এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈধ আমদানিকারকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে সরকারের রাজস্বও ক্রমেই কমতে থাকবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি